নওগাঁয় কৃষকের ৬৩ বিঘা জমির দশ হাজার আম গাছ কেটেছে দূর্বৃত্তরা
নওগাঁ প্রতিনিধি জাগরণ ডট নিউজ
আপডেট: নভেম্বর ১৪, ২০১৯ ০১:৫৪
যতদুর চোখ যায় শুধুই আম বাগান। বিগত মৌসুমে এ আম গাছ গুলোতে আম ধরেছে। আগামী মৌসুমে পরিপূর্ণ আম আসতো এই গাছ গুলোতে। কিন্তু তার আগেই গাছের সাথে শত্রুতা। রাতের আধারে প্রায় ৬৩ বিঘা জমির ১০ হাজার আমগাছ কেটে সাবার করে দিয়েছে দূর্বৃত্তরা।
গাছের সাথে শত্রুতার ফলে পথে বসার উপক্রম হয়েছে ১২ জন আমচাষী। সর্বশান্ত হয়ে গেছে তারা। চোখের সামনে এ দৃশ্য তারা যেন আর সহ্য করতে পারছেন না। নিরবে চোখের পানি ঝড়ছে। কিন্তু কপাল চাপড়ানো ছাড়া তাদের এখন আর কিছুই করার নাই। কারো সাথে এই ১২ জনের কোন বিবাদ নাই। শত্রুতা ও নাই। তাহলে কে করলো এমন কাজ ?
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার তিলনা ইউনিয়নের জামালপুর গ্রাম। এই গ্রামে প্রায় চার শতাধিক বিঘা জমির উপর গড়ে উঠেছে আমবাগান। যতদুর চোখ যায় শুধুই আমের বাগান। গ্রামের প্রায় শতাধিক আমচাষী ৪ বছর ধরে সন্তানের মতো করে লালন করে বড় করে তুলেছে এই বাগান গুলোর আম গাছ।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তের দল উপজেলার জামালপুর গ্রামের পশ্চিম-দক্ষিন পার্শ্বে বিশাল মাঠে রোপিত ১২ জন কৃষকের ৬৩ বিঘা জমির আমের বাগান কেটে তছনছ করে দিয়েছে। খবর পেয়ে আজ বুধবার সকালে বাগানের মালিকরা বাগান এলাকায় গিয়ে বিঘার পর বিঘা জমির কাটা গাছের দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যান। তাদের বুকফাটা আর্তনাদে গ্রামবাসীরাও কেঁদে ফেলেন।
১১ বিঘা জমির উপর চার বছর আগে আমবাগান গড়ে তোলেন জামালপুর গ্রামের মুক্তার হোসেন। তিনি জানান, গত মৌসুমে আমগাছ গুলোতে ভালো ফল ধরেছিলো। আগামী মৌসুমে পরিপূর্ণ ভাবে গাছে আম আসতো। ৬৩ বিঘা জমির প্রায় ১০ হাজার আমগাছ থেকে এই ১২ জন আমচাষী আগামী মৌসুমে প্রায় কোটি টাকার আম বিক্রি হতো। একই কথা বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্থ্য আমবাগানী ফিরোজ হোসেন, সুবল কুমার, আফজাল হোসেন ও হাফিজ উদ্দিন।
গাছ কাটার সংবাদ জানাজানি হলে এলাকার শত শত উৎসুক জনতা এক নজর দেখার জন্য ওই বাগান এলাকায় ভিড় জমায়। কে বা কারা এসব গাছ কেটে ফেলেছে এ বিষয়ে বাগান মালিকদের সাথে কথা হলে তারা কিছুই অনুমান করতে পারছেন না। তারা জানান, তাদের কারো সাথে বিরোধ নাই। বিবাদও নাই। হঠাৎ করে বিশাল ধরণের ক্ষতি সাধন হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ বাগান মালিকগণ হতাশাগ্রস্থ্য হয়ে পড়েছেন।
আজ বুধবার দুপুরে সাপাহার উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কল্যান চৌধুরী ও সাপাহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্র্তা (ওসি) মো. আব্দুল হাই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সাপাহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হাই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, কে বা কারা রাতের আধারে গাছ কেটে রেখে গেছে তা খুজের বের করার জন্য পুলিশ মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। ধারনা করা হচ্ছে, জমি সংক্রান্ত বিবাদ বা পারিবারিক কোন ঘটনা থেকে গাঠ কাটার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। মূলত এখানে দুস্কৃতকারীদের টার্গেট ছিলো একজন। দুস্কতকারীদের যাতে সহজে চিহ্নিত করা না যায় সে জন্য তারা ১২ জনের বাগান কেটে রেখে গেছে। তদন্ত চলছে। আশা করি শীঘ্রই অভিযুক্তদের আটক করা সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে সাপাহার থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
রাতের আঁধারে বাগান হতে অসংখ্য আমগাছ কেটে ফেলার ঘটনায় উপজেলার আমচাষীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। উপজেলার শত শত আমচাষীরা গাছের সাথে শত্রুতাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্ত মুলক শস্তির দাবী জানিয়েছেন।