রংপুরে গড়ে উঠছে দেশের সবচেয়ে বড় সিনথেটিক ও স্পোর্টস জুতোর কারখানা
বাণিজ্য ডেস্ক জাগরণ ডট নিউজ
আপডেট: ডিসেম্বর ৭, ২০১৯ ১২:৩৩
রংপুরের তারাগঞ্জে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে উঠছে দেশের সবচেয়ে বড় সিনথেটিক জুতার কারখানা। প্রবাসী বিনিয়োগকারী হাসানুজ্জামান জানান, দীর্ঘদিনের এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কেবল বাকি শুল্ক সংক্রান্ত কিছু জটিলতা। যার সমাধান হলে ফেব্রুয়ারি থেকেই শুরু হবে বাণিজ্যিক উৎপাদন। এতে কাজের সুযোগ মিলবে সোয়া দুই হাজার মানুষের।
হেমন্তের শেষভাগে উত্তরের প্রকৃতি সবুজ রং হারিয়েছে খানিকটা। শীতের আগমনী বার্তাও ছড়িয়েছে এদিক-ওদিক। শিশির মাড়িয়ে শিশুদের দুরন্তপনা কিংবা ক্ষেত-মাঠের পরিচর্যার ব্যস্ততায় অন্য দিনগুলির মতোই জেগে উঠেছে রংপুরের তারাগঞ্জের ঘনিরামপুর গ্রামটি। তারই মাঝে, অর্থনীতি আর কর্মসংস্থানকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে ব্লিং লেদার নামের শিল্প প্রতিষ্ঠান।
সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে এশিয়ান হাইওয়ের কাছে তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পেছনে ঘনিরামপুরে সাড়ে ৮ একর জমির উপরে স্থাপন করা হয়েছে এই কারখানা।প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করে বছর দুয়েক আগে। এই সময়ে শেষ হয়েছে মূল ভবনসহ আনুষঙ্গিক নির্মাণ। তাইওয়ান থেকে আনা হয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। যা দিয়ে তৈরি করা সম্ভব বিশ্বমানের জুতাসামগ্রী। পরীক্ষামূলক উৎপাদনে কাজও শুরু করেছেন শ পাঁচেক শ্রমিক। যাদের প্রশিক্ষণও চলছে সমানতালে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, উৎপাদন ক্ষমতার হিসেবে, সিনথেটিক এবং স্পোর্টস শ্যুর সবচেয়ে বড় কারখানা এটি। যেখানে দৈনিক তৈরি হবে ২২ হাজার জোড়া জুতা। সিনথেটিক ছাড়াও, প্রস্তুত করা যাবে চামড়ার জুতা এবং অন্যান্য পণ্য। যা রপ্তানি হবে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বড় দেশগুলোতে। এরই মধ্যে বড় ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আশা করছে, আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ বাণিজ্যিক উৎপাদনের।
রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক এ প্রকল্পে ৭৫ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে। ইতোমধ্যে কারখানার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ৩৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১৭ কোটি টাকা দিয়েছে ব্যাংকটি।
রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদসহ ব্যাংকটির শীর্ষ কর্মকর্তারাও গিয়েছিলেন কারাখানাটি পরিদর্শনে।
কারখানা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমরা এক ঢিলে দুই পাখি মারার লক্ষ্যে এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছি। প্রথমত, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঢাকার বাইরে একেবারে গ্রামে বড় একটি কারখানা গড়ে তুলতে সহায়তা করছি। আর দ্বিতীয়ত, আমরা ‘তেলো মাথায় তেল না দিয়ে’ নতুন একজন উদ্যোক্তাকে বেছে নিয়েছি।
“আশা করছি প্রকল্পটি সফল হবে। উত্তরাঞ্চলের অর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।”
হাসানুজ্জামান বলেন, “রংপুর, নীলফামারী ও সৈয়দপুরের অনেক মেয়ে ঢাকায় এপেক্স, বাটার কারখানায় কাজ করে। তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের এখানে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। নিজের বাড়িতে থেকে নিজের এলাকার কারখানায় স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করবে তারা।”
প্রথম দিকে কারখানায় শুধু রপ্তানিমুখী জুতা তৈরি হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে ইউরোপ- আমেরিকাসহ বড় দেশগুলোর ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তাদের প্রতিনিধি কারখানা ঘুরে গেছেন। ভালো সাড়া পেয়েছি।
“তবে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ার কারণে দেশের অভ্যন্তরেও জুতার একটি বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়টিও আমাদের বিবেচনায় রয়েছে।”
প্রায় দেড়শ কোটি টাকা খরচের এই প্রতিষ্ঠান পুরো চালু হলে কাজের সুযোগ হবে সোয়া দুই হাজার মানুষের।