হঠাৎ কক্সবাজার সৈকতে ভেসে এলো শত শত টন প্লাস্টিক ও মদের বোতল
নিজস্ব প্রতিবেদক জাগরণ ডট নিউজ
আপডেট: জুলাই ১২, ২০২০ ২৩:৫২
হঠাৎ করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে অস্বাভাবিকভাবে ভেসে আসছে প্লাস্টিক বর্জ্য, মদের বোতল, ছেঁড়া জাল। একই সাথে সৈকতে আটকা পড়েছে সামুদ্রিক কাছিম। স্থানীয়রা বলছে প্রতিবছর বর্জ্য ভেসে আসলেও এত বর্জ্য তারা আগে দেখেনি। জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেল সৈকতে ভেসে আসা বর্জ্য পরিষ্কার কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি এত বর্জ্যের উৎস খুজতে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
রোববার (১২ জুলাই) কক্সবাজার সৈকতের হিমছড়ি, দরিয়ানগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় শত শত টন প্লাস্টিক, দেশি বিদেশি মদের বোতল, বিভিন্ন ওষুধের বোতল, সুগন্ধি জাতীয় দ্রব্যের বোতল, ডাবের খোসায় সয়লব হয়ে গেছে প্রায় চার কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত। স্থানীয় কিছু লোক ভেসে আসা বর্জ্য থেকে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য খুজছেন। এ সময় টিম কক্সবাজার এবং প্লাস্টিক ব্যাংক বাংলাদেশ নামে দুটি সংগঠনের কর্মীরা সৈকত পরিষ্কারে নামছেন। পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান জাহিদের নেতৃত্বে বীচ কর্মীরাও তাদের সাথে কাজ করছেন।
টিম কক্সবাজারের সমন্বয়ক নাজমুল হক জানান, স্থানীয় লোকজন আমাদের জানিয়েছেন প্রতি বর্ষার সময় পাহাড়ী ঢলের সাথে বর্জ্য ভেসে আসে। এসব বর্জ্য সমুদ্রের পানি দূষিত করে। চলমান করোনা পরিস্থিতির সময়ও তারকা মানের হোটেলগুলোতে এখনো বার চালু রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত অনেক কর্মকর্তা হয়তো রাতের আঁধারে সৈকতে মদ্যপান করেন। আর বোতলগুলো সৈকতে ফেলে চলে যায়। পরবর্তীতে পানিতে ভেসে আসে এসব বোতলজাত দ্রব্য। তবে এত প্লাস্টিক কিভাবে আসছে তা বুঝা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমরা যখন হিমছড়ি এলাকায় আসি তখন বেশ কিছু সামুদ্রিক কাছিম সৈকতে আটক অবস্থায় দেখি। আমরা দ্রুত জীবিত কাছিম উদ্ধার করে গভীর সাগরে দিয়ে আসি। তিনি জানান, বর্ষার সময় সামুদ্রিক কাছিমগুলো ডিম দিতে সৈকতে চলে আসে। হয়তো ডিম পেড়ে যাওয়ার সময় আটকে পড়ে যায় এসব কাছিম। শনিবার ও রোববার আমরা ১৭ টি কাছিমকে সাগরে ফেরত পাঠিয়েছি। ৫টি কাছিমকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি এবং ২টি অর্ধমৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। গত দুইদিন ধরে প্রচুর বর্জ্য সৈকতে আসলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের কাউকে সেখানে দেখা যায়নি বলে জানান তিনি।
আগামিকাল সৈকত পরিষ্কার অভিযানে নামার ঘোষণা দেন তিনি।
রফিকুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, প্রতি বছর বিভিন্ন বর্জ্য সৈকতে ভেসে আসে। তবে এবারে ভেসে আসা বর্জর মধ্যে রয়েছে বেশিরভাগ মদের বোতাল, প্লাস্টিক এবং ডাবের খোসা। এত অস্বাভাবিক বর্জ্য আমরা পূর্বে কখনো দেখিনি।
প্লাটিক ব্যাংক বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠিতা সাকির আলম বলেন, গত ১১জুলাই কক্সবাজার সৈকতে প্লাটিক সংগ্রহ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আমি আবাক হয়েছি। সৈকতের সায়মান ও সুগন্ধ্যা পয়েন্ট থেকে ২টনের বেশি প্লাটিকের বোতলসহ নানান প্লাটিকসমাগ্রী পাওয়া যায়। যা পরবর্তী পুড়িয়ে ফেলা হয়।
তিনি আরও বলেন, যে পরিমাণ প্লাস্টিকে স্তুপ সৈকতে দেখা যাচ্ছে কার্যকর কোন ব্যবস্থা না নিলে সামনে পরিবেশের ভায়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান জাহিদ খান বলেন, গত এক সপ্তাহ পূর্বেও আমি সৈকতে এসেছিলাম। কিন্তু এত বর্জ্য আমি কখনো দেখিনি। স্থানীয়রাও আমাকে এমনটাই জানিয়েছেন। বিশেষ করে অস্বাভাবিকভাবে প্লাস্টিক বর্জ্য ও মদের বোতল কিভাবে আসলো তা তদন্ত করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সৈকতে ভেসে আসা জীবিত এবং মৃত ২৪টি কাছিম উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া কাছিমের মধ্যে জীবিত ১৭টি গভীর পানিতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। দুটি অর্ধমৃত কাছিম পানির ধারে রাখা হয়েছে। একটু সুস্থ হলেই সৈকতে ছেড়ে দেয়া হবে। মৃত ৫টি কাছিম মাটি চাপা দেয়ার কাজ করা হচ্ছে। এরপরে পুরো সৈকত জুড়ে টহল দিয়ে সব তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ডিম পাড়ার মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। কাছিমগুলো ডিম পাড়তে নয়, অন্যকোন কারণে হয়তো ভেসে এসে আটকা পড়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের নাম্বারে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।