শিরোনাম
জাগরণ ডেস্কঃ জাগরণ ডট নিউজ
আপডেট: আগস্ট ৪, ২০২০ ১২:৪৭
আমার ছেলে বাস্তবের একজন নায়ক ছিল। সে সাহসের সাথে মৃত্যুকে বরণ করেছে। সে কোনো কাপুরুষ ছিলো না। একজন জাতীয় বীর ছিল। সে ছিল একজন সত্যিকারের প্রেরণাদাতা। আমাদের সকল আত্মীয়, সব বন্ধু তার কাছ থেকে জীবনের উৎসাহ পেতো। সে সবসময়ই হাস্যজ্জল এক চমৎকার মানুষ ছিল, যে সবসময়ই মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে এবং অন্যদের সুখী করতে চেষ্টা চালাতো। অপরের সুখের জন্য জীবন উৎসর্গ করাই ছিল তার অন্যতম ব্রত। আমাকে বিন্দুমাত্র জিজ্ঞাসা না করেও আমার সকলে আরামের দিকে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ নজর ছিলো।
চাকরির কারণে তার পোস্টিং যেখানেই হোক না কেন আমি যাতে ভালো থাকি, আরামে থাকি সে নিয়ে তার চেষ্টার অন্ত ছিল না। বাড়ির প্রতিটা কাজে আমাকে সাহায্য করতো। সবকাজ সবসময়ই নিজে নিজেই করে আমাকে সবসময় চমকে দেওয়ার কাজটা সে খুব ভালো পারতো। আমাদের বাড়ির প্রতিটি কোণা, প্রতিটি দেয়াল সে নিজের হাতে সাজিয়েছিল।
তার বাবার মৃত্যুর সময় আমাদের বাড়িটা দুইতলা ছিল। কিন্তু যখন সে এসএসএফে পোস্টিং পেল (তার ১৬ বছরের সামরিক জীবনে যে একটি মাত্র সময়েই সে ঢাকায় পোস্টিং পেয়েছিল)। তখনই সে হাউজ বিল্ডিং থেকে ঋণ নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে আমাদের বাড়িটা চারতলা করে। এই নির্মাণ কাজের তদারকি করার জন্য সে অধিকাংশ সময়ই রাতে আসতো। যেহেতু এসএসএফের দায়িত্বে ব্যস্ততা অত্যন্ত বেশি থাকায় এছাড়া সময় পেত না।
আমার ছেলেকে তার কোন ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমি আটকে রাখি নাই, কোন সময়েই না। যা যা সে করতে চেয়েছে আমি স্বাধীনতা দিয়েছি। অবশ্য সে আমাকে সবসময়ই বুঝিয়ে ফেলতে সক্ষম হতো কোন না কোন ভাবে। আমাকে না বুঝিয়ে সে একটা কাজও করেনি। সে সবসময়ই আমার অনুমতি নিয়ে নিত সেই কাজগুলোর জন্য যেগুলো তাকে সুখী করতে পারে। যাতে তার ভালো লাগে। সেই কাজগুলোতে আমার সবসময়ই সায় ছিল।
সে ছিল একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। দেশকে যে নিজের চেয়ে বেশী ভালোবাসতো। আমার ছেলে ছিল দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। সে সমুদ্র ভালোবাসতো। সমুদ্র সৈকতে বই পড়তে পড়তে সময় কাটাতে চাইতো। শৈশব থেকেই আমার ছেলে অ্যাডভেঞ্চারের ভক্ত ছিল। সারা বিশ্ব ভ্রমণের এক প্রগাঢ় সাধ ছিলো তার, যে জন্য বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী থেকে সে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছিল। আমি তাকে নিষেধ করি নাই। তার হিমালয়ে যাবার স্বপ্ন ছিল। ছেলেটা হাইকিং পছন্দ করতো, জাপানে একটা সাইকেল ট্যুরে যেতে চেয়েছিলো। চাকুরি থেকে অবসরের পরপরই সে তার এই স্বপ্নগুলো ছোঁয়ার জন্য প্রস্তত হচ্ছিল।
এর মাঝে করোনা মহামারি চলে এলো। দেশব্যপী লকডাউন শুরু হবার কদিন পরে সে জানালো যে, তাকে নিয়মিতই বাহিরে যাতায়াত করতে হয়, এবং আমি একজন বয়স্ক মানুষ, তাই তার এই চলাফেরা আমার জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এরপর সে বলল যে, রাজশাহী যাবে কিছুদিনের জন্য, সেখানে তার এক বন্ধুর মা (যিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন) এক বিশাল লাইব্রেরী করেছেন। ছোট থেকেই সে প্রচুর বই পড়তো। তাই তাকে আমি যেখানে যেতে দিলাম। বললাম প্রচুর পড়াশোনা করতে। সে রাজশাহীতে প্রায় চার মাস ছিল এবং আস্তে আস্তে নিজেকে বিশ্ব ভ্রমণের জন্য প্রস্তত করছিল। আমার ছেলেটার তীব্র ভ্রমণের নেশা ছিল। যখন সে জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা মিশনে ছিল, ছুটিতে বাংলাদেশে আসতো না। তার বদলে দুই মাসের ছুটিতে ইউরোপ যেয়ে গাড়ী করে হাজার হাজার মাইল ড্রাইভ করে নিজে নিজে ঘুরেছিল। এটা আমার খুব ভালো লেগেছিল কারণ ছেলেটা অন্তত নিজের একটা স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছিল। আমার পূর্ণ সমর্থন ছিল এই সিদ্ধান্তের প্রতি।
চাকরি থেকে অবসর নেবার পর প্রতি রাতে সে আমার মশারি টাঙ্গিয়ে দিত। আমার সকল ঔষধপত্র নিজে নিজেই সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতো, যাতে আমার বুঝতে বিন্দুমাত্র সমস্যা না হয়। যখনই বাড়ির বাহিরে যেত, সবসময়ই নিজের চাবি নিয়ে যেত, যাতে আমাকে বিরক্ত না করতে হয় দরজা খোলার জন্য।
রাজশাহী থেকে ফিরে মাত্র ক’দিন আমার সাথে ছিল। এবং তারপর কক্সবাজারে এক মাসের জন্য থেকে একটা তথ্যচিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা জানালো। আমি সম্মতি দিয়েছিলাম। সে বিয়ে করেনি, আর আমিও তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চাইনি।
২৬ জুলাই ছিল ওর জন্মদিন। অনলাইন সার্ভিসের মাধ্যমে সে যে রিসোর্টে ছিল সেখানে এক বাক্স চকলেট পাঠিয়ে ছিলাম। কোরবানির ঈদের সময় ছেলেটা আমাকে কক্সবাজারে যেয়ে ওর সাথে ঈদ করতে বলছিল, কারণ তথ্যচিত্রের শুটিংয়ে নাকি আরও কয়েকদিন সময়ের দরকার ছিলো। অসুস্থতার কারণে আমার যাওয়া হয়ে উঠেনি।
৩১ জুলাই রাত ১১টায় আমি ছেলেকে ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু ফোন কেউ ধরে নাই। অবশেষে পুলিশ আমাকে ফোন করে আদনানের (মেজর সিনহার ডাকনাম) মৃত্যুসংবাদ দেয়। আমার ছেলে একজন শহীদ। একজন বীরের রক্ত এবং মায়ের অশ্রু বৃথা যেতে পারে না। আশা করি পরম করুণাময় তাকে জান্নাতে আশ্রয় দিবেন। আমিন।
পূর্বপশ্চিমবিডি
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশগামী যাত্রীদের বিস্তারিত
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’-এ পরিণত হওয়ায় সাগর উত্তাল বিস্তারিত
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, কাল রোববার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে। তবে বিস্তারিত
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে না পেরে বিক্ষোভ করেছেন বিস্তারিত
চীনের সিনোফার্মের তৈরি আরও ৫৪ লাখ ডোজ টিকার চালান দেশে পৌঁছেছে। শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে বিস্তারিত
চলতি বছর দেশে বড় বন্যার শঙ্কা নেই। বন্যাকবলিত সব এলাকার পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে। বিস্তারিত
আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে ৫০ লাখ করে করোনা ভাইরাসের টিকা আসবে বলে বিস্তারিত
বাংলাদেশকে ২ লাখ ৭০ হাজার টিকা উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপের দেশ বুলগেরিয়া। দেশটির বিস্তারিত
ট্রেইনি কনস্টেবল পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। জেলা অনুযায়ী শূন্যপদের বিস্তারিত
© Copyright JAGORON.NEWS
Developed By Muktodhara Technology Limited