শিরোনাম

যেসব কারণে জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের একাংশ গ্রাস করতে চান নেতানিয়াহু

জাগরণ ডেস্কঃ জাগরণ ডট নিউজ

আপডেট: আগস্ট ৬, ২০২০ ১৯:৫৭

image দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইল জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের ৩০ শতাংশ এলাকা অধিকৃত ভূখণ্ডের সঙ্গে একিভূত করার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ইসরাইলের এ পদক্ষেপের ফল কি হতে পারে না নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ।

ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের একাংশকে ইসরাইলের সঙ্গে একিভূত করার পরিকল্পনা ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়ন করবেন বলে জানিয়েছিলেন। ফিলিস্তিনের বিভিন্ন সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে ব্যাপক বিরোধিতা ও একের পর এক হুঁশিয়ারির পরিপ্রেক্ষিতে, এমনকি ইসরাইলের মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য ওই পরিকল্পনার বিরোধিতায় করায় এবং সেইসঙ্গে তারা এ ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পেরও নীতির বিরোধিতা করায় নেতানিয়াহু আপাতত ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে ইসরাইল কেন জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের ৩০ শতাংশ ভূমি দখলিকৃত ভূখন্ডের সঙ্গে একিভূত করতে চায়। এক হাজার ৬১৩ বর্গ কিলোমিটার ওই এলাকায় ১৩০টি ইহুদি উপশহর রয়েছে যেখানে চার লাখ ৬০ হাজারের বেশি ইহুদি বসবাস করছে।  পশ্চিম তীরে প্রাচীরের মধ্যে তিন লাখ ৫০ হাজার ইহুদির জন্য ৫২টি উপশহর এবং প্রাচীরের বাইরে ৭৮টি উপশহর এক লাখ ইহুদির জন্য বরাদ্দ রয়েছে।

জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের ৩০ শতাংশ ভূখণ্ডকে ইসরাইলের সঙ্গে একিভূত করার পেছনে আরো কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, ইসরাইলের সম্প্রসারণকামিতা ও দখলদারী মানসিকতা। ইসরাইল জন্মগতভাবেই একটি আগ্রাসী শক্তি। কেননা ইউরোপের সহযোগিতায় ফিলিস্তিন ভূখণ্ড দখল করেই তারা অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং আরব ভূখণ্ড জবর দখলের প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় ইসরাইলের মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যের মতামতের বিষয়টি বাদ দিয়ে বলা যায় সামগ্রিকভাবে তারা পুরো ফিলিস্তিন ভূখণ্ড গ্রাস করে নেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রচণ্ড অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটে আছেন। তার ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা হুমকির সম্মুখীন।

২০১৮ সালের শেষের দিকে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়ার পর শুরু হয় তাদের রাজনৈতিক অচলাবস্থা। তিন দফায় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও এখনো রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটেনি। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে লিকুদ পার্টির নেতা  নেতানিয়াহু  এবং নীল ও সাদা দলের নেতা বেনি গান্তেয যৌথ মন্ত্রিসভা গঠনে সম্মত হয়ে দেশ চালাচ্ছেন। কিন্তু ইসরাইলের কোনো কোনো সূত্র জানিয়েছে, নেতানিয়াহু মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে অথবা নতুন করে নির্বাচন দিয়ে বেনি গান্তযকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। ক্ষমতার লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য নেতানিয়াহু জর্দান নদীর পশ্চিম তীরকে ইসরাইলের সঙ্গে একিভূত করার চেষ্টা করছেন যাতে জন সমর্থন ধরে রাখা যায়।

তৃতীয় কারণ হচ্ছে, আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের ক্ষমতার মেয়াদ প্রায় শেষ হতে চললো। ইসরাইল ও ইহুদিবাদী লবির সমর্থন ধরে রাখতে ট্রাম্প গত চার বছরে ইসরাইলের স্বার্থ টিকিয়ে রাখার জন্য 'ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি' নামক বিতর্কিত পরিকল্পনা উত্থাপন করেছেন। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তেলআবিব থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসে দূতাবাস স্থানান্তর করে বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। সেইসঙ্গে সিরিয়ার গোলাম মালভূমিকেও ইসরাইলের অংশ বলে তিনি স্বীকৃতি দিয়েছেন। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এ জন্য চিন্তিত যে আগামী নভেম্বর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হতে পারেন। এ কারণে নেতানিয়াহু আমেরিকায় আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই জর্দান নদীর পশ্চিম তীরকে ইসরাইলের সঙ্গে একিভূত করার চেষ্টা করছেন।

অন্য দেশের  ভূখণ্ডের একটি অংশকে নিজ দেশের সঙ্গে একিভূত করার অর্থ হচ্ছে নতুন ওই এলাকার উপর চীরতরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। ১৯০৭ সালে হেগের চতুর্থ কনভেনশন ও ১৯৪৯ সালে জেনেভা চতুর্থ কনভেনশনের যুদ্ধরীতি এবং ১৯৭৭ সালে সংযুক্তকরণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক নীতির আলোকে অন্য দেশের ভূমি সংযুক্তকরণকে দখলদারি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল মাত্র শান্তি চুক্তির আওতায় এবং স্থানীয় জনগণের মতামত তথা গণভোটের মাধ্যমে এভাবে ভূখণ্ড হস্তান্তর করা যাবে। এসব আইনের ভিত্তিতে বলা যায় ইসরাইল জর্দান নদীর পশ্চিম তীরকে অধিকৃত ভূখন্ডের সঙ্গে একিভূত করার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এ ছাড়া, ইসরাইলের এ পদক্ষেপ বর্ণবাদী পরিকল্পনা। কেননা এখানে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের বিষয়টিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে এবং তাদের ঘরবাড়িগুলো ও কৃষিখেত
অবৈধ ইহুদি বসতি

অভিবাসী ইহুদিদেরকে দেয়া হয়েছে। ইসরাইলের এ আচরণ জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সব আইন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন।

অ্যামনেস্টি ইন্টার ন্যাশনালের উত্তর  আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দফতরের সচিব সালেহ হোজ্জাজি জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের ৩০ শতাংশ এলাকা স্থায়ীভাবে দখলের ইসরাইলি পরিকল্পনাকে আন্তর্জাতিক আইনের খেলাফ বলে অভিহিত করেছেন।

যাইহোক, ইসরাইলের এ পদক্ষেপ রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনাও বটে। ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তি অনুযায়ী গাজা উপত্যকা ও জর্দান নদীর পশ্চিম তীর ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষের অধীনে রয়েছে যা মূল ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের মাত্র ২০ শতাংশ। কিন্তু এখন ইসরাইলের চোখ পড়েছে পশ্চিম তীরের দিকে যা অসলো চুক্তির লঙ্ঘন। এ কারণে ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষও ঘোষণা করেছে ইসরাইল যদি তার ওই ঘৃণ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে তাহলে তারাও আমেরিকা ও ইসরাইলের সঙ্গে করা সমস্ত শান্তি চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাবে। ইউরোপও বাহ্যিকভাবে হলেও ইসরাইলের ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।

যাইহোক, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া হওয়ায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু শেষ পর্যন্ত জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের ৩০ শতাংশ এলাকা সংযুক্ত করার পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে গেছেন। তবে তিনি এ পরিকল্পনা একেবারে বাদ দেননি এবং ইসরাইল উপযুক্ত সময়ে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। ফিলিস্তিনের অন্যান্য সংগ্রামী দলগুলোও হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছে, প্রয়োজনে ইসরাইলের বিরুদ্ধে তারা নতুন করে যুদ্ধ শুরু করবে।  এ ব্যাপারে অ্যামনেস্টি ইন্টার ন্যাশনালের উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দফতরের সচিব সালেহ হোজ্জাজি বলেছেন, ইসরাইলের টার্গেটকৃত এলাকাকে ইহুদিকরণ করা হলেও তারা দখলদার হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

পার্সটুডে

image
image

রিলেটেড নিউজ


সাবেক আফগান ভাইস প্রেসিডেন্টের ভাইকে হত্যা, দাফনেও বাধা তালেবানের

আফগানিস্তানের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ’র ভাই রোহুল্লাহ আজিজিকে হত্যার বিস্তারিত


তালেবানের হাতে ‘মার খাচ্ছেন’ আফগান সাংবাদিকরা

আফগানিস্তানে বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ ও ছবি তুলতে গিয়ে তালেবানের হাতে আটক, মারধর ও বিস্তারিত


আফগানিস্তানে ৩১ মিলিয়ন ডলারের জরুরি সহায়তা দিচ্ছে চীন   

খাদ্য সরবরাহ ও করোনভাইরাসের টিকাসহ আফগানিস্তানকে ২০ কোটি ইউয়ান (৩ কোটি ১০ লাখ ডলার) বিস্তারিত


ইন্দোনেশিয়ায় কারাগারে অগ্নিকাণ্ডে নিহত অন্তত ৪০

ইন্দোনেশিয়ার বানতেন প্রদেশের এক কারাগারের জনাকীর্ণ একটি ব্লকে আগুন লেগে অন্তত ৪০ জনের বিস্তারিত


সবাইকে নিয়ে আফগানিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিকল্পনা

চলতি মাসের শুরুর দিকে পশ্চিমা-সমর্থিত সরকারকে বিতাড়িত করে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসা বিস্তারিত


কাবুল বিমানবন্দরে হামলায় নিহত ছাড়াল ১০০

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের বিমানবন্দরে ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বিস্তারিত


কাবুল যেন লাশের স্তূপ

পশ্চিমা কয়েকটি দেশের জঙ্গি হামলার আশঙ্কা প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতে আফগানিস্তানের বিস্তারিত


কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে বোমা হামলায় নিহত ১৩: তালেবান

আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে একটি বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এ বিস্তারিত


কাবুল বিমানবন্দরে এক বোতল পানি ৩৫০০, ভাতের প্লেট ৮৫০০ টাকা

তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পতন হওয়ার পর ১০ দিন পার হয়েছে। সারাদেশের বিস্তারিত


image
image

নামাজের সময়সূচি

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত

এক ক্লিকে বিভাগীয় খবর

আবহাওয়া

ক্যালেন্ডার

March 2017
M T W T F S S

চট্টগ্রাম বন্দরের সিডিউল

বিমান বন্দরের সিডিউল


Cities_image
Cities_image

জোয়ার ভাটা

Cities_image