রুপালী ইলিশ সরে গেছে গভীর সমুদ্রে
নিজস্ব প্রতিবেদক জাগরণ ডট নিউজ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২০ ১২:০৩
গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবছর জাতীয় মাছ ইলিশের প্রাপ্যতা আশানুরুপ হলেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে বিচরণে। বঙ্গোপসাগর ও এর নদনদীর মোহনার কয়েকটি নিদির্ষ্ট বিচরণ ক্ষেত্র ও অভ্যন্তরীন নদীগুলোতে এবার মাছ পাচ্ছেনা জেলেরা। তবে, গভীর সমুদ্রে ঠিকই ধরা পড়ছে ঝাকে, ঝাকে।
বঙ্গোপসাগরের বম্মপুত্র- গঙ্গা- মেঘনা অববাহিকার অভিবাসী মাছ হিসেবে পরিচিত ইলিশের চলাচলের পথে বাধা সৃষ্টি ও বিচরণক্ষেত্রের সামগ্রিক পরিবেশ ঠিক না কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্যাকেজ: দেশের প্রাকৃতিক উৎসে সর্বাধিক আহোরিত একক প্রজাতির মাছ ইলিশের চারটি বড় বিচরণ ক্ষেত্রের একটি হচ্ছে মেঘনা মোহনার সন্দ্বীপের দক্ষিন অংশ। মওসুমের মাঝামাঝি এসেও এখানে ছোট নৌকার মালিক জেলেদের জালে তেমন ইলিশ নেই।
মৎস্যজীবি মন্টু বলেন, জোয়ার- ভাটার সময় মাছ ধরা পড়লেও এবার তেমনটি হচ্ছেনা। নৌকার মালিক ও সর্দ্দাররা প্রচুর টাকা দেনা আছেন এখনো।
এই মওসুমের আর যে কয়দিন আছে তখন হয়তো মাছ ধরা পড়তে পারে বলে আশায় বুক বেধে আছেন এই মৎস্যজীবি।
গত কয়েক বছর দেশে ইলিশের প্রবৃদ্ধি ছিলো ১০ শতাংশের মত, যাতে বছরের আহোরিত এই মাছের পরিমান ৬ লাখ টনের কাছাকাছি পৌছেছে।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকার প্রান্তিক জেলেরা মনে করছেন পর পর কয়েক বছর বেশি ধরা পড়ায় এবার তাদের এলাকায় ইলিশ মাছ কমে গেছে, যেটি একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা, তাই তারা অন্য মাছ ধরায় ব্যস্ত।
পতেঙ্গার মৎস্যজীবি জীবন বলেন, গত কয়েক বছর প্রচুর মাছ ধরা হয়েছে, তাই এই বছর মাছ কম। প্রেতিবছর এই সময় শুধুমাত্র ইলিশ মাছ ধরা হলেও এবার পোয়া, লইট্টাসহ অনান্য মাছও ধরা হচ্ছে।
উপকূলের কাছাকাছির ছোট নৌকা ও কম জালের জেলেরা যখন ইলিশ কমের কথা বলছেন তখন গভীর সমুদ্রের তুলনামুলক বড় নৌকা ও ট্রলারগুলো ঘাটে ফিরছে ইলিশ ভর্তি হয়ে।
বঙ্গোপসাগরের গভীরের দিকের দক্ষিন চট্টগ্রাম- কক্সবাজার এলাকা এবং মেঘনা মোহনার পশ্চিম পাশে ভোলা থেকে সন্দুরবন পর্যন্ত এলাকায় ইলিশ মাছের কমতি নেই বলে জানিয়েছেন যান্ত্রিক- অযান্ত্রিক নৌযান মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বাবুল।
তিনি বলেন, এটা আল্লাহর বিশেষ দয়া, সমুদ্রে মাছের কমতি নেই, নোনা পানিতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। তবে, মোহনার কাছাকাছি কিংবা নদীতে মাছ কম দেখা যাচ্ছে। সম্ভবত মোহনায় নানা ধরনের জাল বসানো থাকে, যা ইলিশের চলাচলের পথ বাধাগ্রস্ত করছে।
প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে, নদীর মোহনায় অতিরিক্ত জাল বসানোর কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ইলিশের বিচরণ। তাছাড়া নদীর পানিতে লবনাক্ততা এবং দূষণের মাত্রা বৃদ্ধিসহ আরো নানা কারণে ইলিশ মাছের বিচরনক্ষেত্র পরিবরÍন হতে পারে। যেমনটি বলছিলেন সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক লতিফুর রহমান।
তিনি বলেন, কেন এমনটি হচ্ছে তা গবেষণা করা প্রয়োজন। বছর শেষে এই সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যাবে।
উপকূলের কাছাকাছি ও নদীতে ইলিশ মাছ কমে যাওয়াতে বঞ্চিত হচ্ছে ক্ষুদ্র জেলেরা, যাদের পক্ষে বেশি বিনিয়োগে বড় ট্রলার ও জাল নিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা সম্ভব হয়না।