২০ অক্টোবর থেকে ধর্মঘটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নৌ শ্রমিকদের
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ জাগরণ ডট নিউজ
আপডেট: অক্টোবর ১১, ২০২০ ০০:৩৯
শ্রমিকদের নিয়োগপত্র ও মাসিক খাদ্যভাতা প্রদানসহ ১১ দফা দাবি আদায়ে ২০ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের নৌযান ধর্মঘট ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন।
নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম শনিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এছাড়া ১৫ দফা দাবিতে সারাদেশে লাগাতার ধর্মঘটে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নৌ শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্য পরিষদ। তাদের ১৫ দফার মধ্যেও মাস্টারশিপ-ড্রাইভারশিপ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও দুর্নীতি বন্ধ এবং শ্রমিকদের নিয়োগপত্র ও খাদ্যভাতাসহ ফেডারেশনের অধিকাংশ দাবি রয়েছে। ১৯ অক্টোবর রাতের প্রথম প্রহর (১৮ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট) থেকে তাদের ধর্মঘট শুরু হবে।
১২ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে ঐক্য পরিষদ নেতারা জানিয়েছেন।
নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন নেতারা জানান, শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নিয়োগপত্র প্রদান, ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে প্রফিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন, খাদ্যভাতা প্রদান এবং নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের পরীক্ষায় অনিয়ম বন্ধ হয়রানি বন্ধসহ ১৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য ২০১৫ সাল থেকে তারা আন্দোলন করে আসছেন। এগুলোর কয়েকটি পূরণ হলেও অমীমাংসিত ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ২০১৮ সালে আবারো শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেন ফেডারেশন নেতারা; যার অনুলিপি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, নৌযান মালিকদের বিভিন্ন সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে দেওয়া হয়। কিন্তু শ্রম ও কর্মসংস্থান অধিদপ্তর থেকে সমস্যা সমাধানে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম লাগাতার ধর্মঘট আহ্বানের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শ্রমিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা চাই, নৌ সেক্টরের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা। কিন্তু শ্রমিকদের পেটে খিদে থাকলে এবং প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হলে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রতিটি দাবি যৌক্তিক। শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে সরকারি প্রতিষ্ঠানের নৌ শ্রমিকদের জন্য কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও ফিশারিসহ অন্যান্য বেসরকারি খাতের নৌ শ্রমিকদের জন্য কল্যাণ তহবিল গঠন, মাসিক খাদ্যভাতা প্রদান, নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের বিভিন্ন পরীক্ষায় অনিয়ম ও হয়রানি বন্ধ- এসব দাবি পূরণ না হলে নৌ সেক্টর কখনও স্থিতিশীল হবে না।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক লীগসহ কয়েকটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘নৌ শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ ১৫ দফা দাবিতে লাগাতার ধর্মঘট ডাকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের দাবির মধ্যেও নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের উপরোক্ত প্রধান দাবিগুলো রয়েছে; যেমন নিয়োগপত্র ও খাদ্যভাতা প্রদান, সার্ভিস বুক, কল্যাণ তহবিল গঠন, মাস্টারশিপ ও ড্রাইভারশিপ পরীক্ষায় অনিয়ম বন্ধ ইত্যাদি।
ঐক্য পরিষদের এ বিষয়ক দাবিতে বলা হয়েছে- মাস্টারশিপ ও ড্রাইভারশিপ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের সকল প্রকার দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
নৌ শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাদাত হোসেন বলেন, ১৫ দফা দাবির সমর্থনে আমরা ইতোমধ্যে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এছাড়া শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান ও নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সবাই আশ্বাস দিলেও আমাদের দাবি আজ পর্যন্ত পূরণ হয়নি। এ অবস্থায় ধর্মঘটে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ আমাদের সামনে খোলা নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা ১২ অক্টোবর সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও মানববন্ধন ডেকেছি। ওই কর্মসূচি থেকেই আমরা সারা দেশে লাগাতার ধর্মঘটের ঘোষণা দেব।