ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলা: বিচার কার্যক্রম শুরু

দিনাজপুর প্রতিনিধি: জাগরণ ডট নিউজ

আপডেট: ডিসেম্বর ১৭, ২০২০ ১৮:১৮

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলার ঘটনায় মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার মামলার বিচারিক কার্যক্রমের প্রথম ধার্য তারিখে আসামির উপস্থিতিতে দিনাজপুরের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক বিশ্বনাথ মন্ডল আগামী ২৯ ডিসেম্বর চার্জ গঠনের দিন ধার্য করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুর আদালত পুলিশ পরিদর্শক ইসরাইল হোসেন ও দিনাজপুর অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) শাহ্ দোরখ শান্ (এডমিরাল)।

আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) শাহ্ দোরখ শান্ (এডমিরাল) বলেন, আদালতের বিচারিক কার্যক্রমের প্রথম ধার্য তারিখে দুপুরে আসামি রবিউল ইসলামকে দিনাজপুরের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আসামি রবিউলের আইনজীবী শহীদুর রহমান জামিনের আবেদন করলে আদালতের বিচারক বিশ্বনাথ মন্ডল জামিন নামঞ্জুর করেন। একইসাথে আগামী ২৯ ডিসেম্বর তারিখে মামলার চার্জ গঠনের জন্য দিন ধার্য করেন। পরে আসামিকে পুনরায় জেল হাজতে পাঠানো হয়।

এর আগে মামলাটি আমলী আদালত-৭ (ঘোড়াঘাট)এ তদন্ত কার্যক্রম সমাপ্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা সমস্ত মামলার নথিপত্র আদালতে জমা দেন। পরে দিনাজপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মামলাটি বিচারিক কার্যক্রম ও নিস্পত্তির জন্য বিচারিক আদালত-২, অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে দেওয়া হয়।

দিনাজপুর আদালত পুলিশ পরিদর্শক ইসরাইল হোসেন বলেন, ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার উপর হামলার ঘটনায় একমাত্র আসামি রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে গত ২১ নভেম্বর দিনাজপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী আদালত-৭)-এ এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দিনাজপুর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি)’র ওসি ইমাম আবু জাফর।

তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, এই মামলার সবদিক বিবেচনা করে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ঘটনার একমাত্র পরিকল্পনাকারী এবং হামলাকারী আসামি রবিউল ইসলাম। এজন্য তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে অন্য যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো ঘটনার সাথে তাঁদের কোন সম্পৃক্ততা না থাকায় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

পুলিশের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা জানান, অভিযোগপত্রে এই মামলায় সিসি ফুটেজ পর্যালোচনা, মোবাইল নেটওয়ার্ক, আলামত হিসেবে ব্যবহৃত লাঠি, হাতুড়ি, ফরেনসিক রিপোর্ট, এমই রিপোর্ট, নোকিয়া ফোন, নগদ ৪৫ হাজার টাকাসহ ৩১টি আলামত থাকার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও অভিযোগপত্রে ৫৩ জনকে স্বাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে যাদের মধ্যে ৫ জন স্বাক্ষী ইতিমধ্যেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এই মামলায় প্রায় পৌনে ৩ মাসের সময়ে ৪০ জনেরও বেশি জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২ সেপ্টেম্বর দিনগত রাত ২টার দিকে সরকারি ডাকবাংলাতে ঘোড়াঘাট ইউএনওর ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলী শেখের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় তাদেরকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে দুপুর ১টায় হেলিকপ্টার যোগে ইউএনওকে জাতীয় নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ভাই শেখ ফরিদ বাদী হয়ে ঘোড়াঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১১ সেপ্টেম্বর রাতে জেলার বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের বিজোড়া গ্রামের খতিব উদ্দীনের ছেলে ও ঘোড়াঘাটের ইউএনও বাসভবনের সাবেক কর্মচারী রবিউল ইসলামকে আটক করা হয়। ২০ সেপ্টেম্বর নিজের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন রবিউল ইসলাম। পরে এই মামলার সাথে সিসি ফুটেজ, মোবাইল নেটওয়ার্ক, ফরেনসিক রিপোর্ট, ব্যবহৃত হাতুড়িসহ ৩১টি আলামতের মাধ্যমে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, এই ঘটনার সাথে একমাত্র রবিউল ইসলামই জড়িত।