শিরোনাম

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রাখাইনে ফেরানো লক্ষ্য

কক্সবাজার প্রতিনিধি: জাগরণ ডট নিউজ

আপডেট: আগস্ট ২৫, ২০২১ ১২:২৯

image

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের ‍মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ঢল নামার পর কেটে গেছে চার বছর। তবে বাস্তুচ্যুত শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরাতে পারেনি বাংলাদেশ। সরকার এ বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে গেলেও খুব বেশি আগানো যায়নি। এরই মধ্যে গত ডিসেম্বরে রোহিঙ্গাদের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তর শুরু হয়, এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারা। তবে তারা বলছেন রোহিঙ্গাদের ফিরতে হবে নিজ দেশে, এটাই সমাধান। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার আগেও রোহিঙ্গা কয়েক লাখ রোহিঙ্গা এদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। তবে নতুন করে রোহিঙ্গাদের আসার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের প্রত্যাবাসনের দাবি জোরালো হয়। 


এ অবস্থায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থমকে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াত  জানান, “প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াটি চলমান, বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখছে। তারা সব ঠিক করে যখন আমাকে দিন ধার্য্য করে দেবে, তখন রোহিঙ্গাদের পাঠানোর দায়িত্ব আমার।”


“ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পাঠানোকে প্রাথমিক সাফল্য মনে করছি আমরা। তবে চূড়ান্ত সাফল্য তখনই, যখন তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যাবে,” যোগ করেন এই অতিরিক্ত সচিব।

রোহিঙ্গারা নিজের ইচ্ছায় ভাসানচরে গেছে উল্লেখ করে আরআরআরসি বলেন, “কক্সবাজারে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার ঝুঁকিপূর্ণভাবে অবস্থানের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে সরকার নিজের টাকায় ভাসানচরে তাদের উন্নত ও নিরাপদ জীবন আর জীবিকা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় স্বেচ্ছায় ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”

বর্তমানে স্থানান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ থাকলেও আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই কক্সবাজার থেকে একলাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।   

গত বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতে কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শনে যান দুই নারীসহ ৪০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল। ফিরে এসে প্রতিনিধি দল সেখানে গড়ে উঠা আবাসন প্রকল্পের অবকাঠামো দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশের চার মাসের মাথায় ডিসেম্বরের শেষে দিকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি স্থানান্তর হয়। তবে এর আগে মে মাসে সাগর পথে মালয়েশিয়া পালানোর সময় উদ্ধার হওয়া দুই শতাধিক নারী ও শিশু মোট ৩০৬ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

ভাসানচরে ২০১৫ সালে প্রথম শরণার্থীদের বসবাসের জন্য আবাসন গড়ার পরিকল্পনা করা হয়। সে সময় চরটিতে কোনও জনবসতি ছিল না। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণভয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে পালিয়ে এলে চরটিতে অবকাঠামো গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

টেকনাফ ও উখিয়ায় অবস্থিত শরণার্থী শিবিরগুলোর জনাকীর্ণ অবস্থা এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ভাসানচর পরিকল্পনা (আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্প) দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। পলি জমে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ভাসানচরে ২০১৮ সালের শুরুর দিকে নির্মাণকাজ শুরু হয়। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মাত্র দেড় বছরে চরটিতে এক লাখ মানুষের বসবাসের উপযোগী অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়।

যেভাবে ভাসানচরে যাত্রা
গত বছরের ডিসেম্বরে ৮৮৪ শিশুসহ এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা সদস্যের প্রথম দল কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। কয়েক দফা মিলে এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার ৫২১ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরের নতুন ঠিকানায় এসেছেন। তার মধ্যে পুরুষ চার হাজার ৪০৯ জন। নারী পাঁচ হাজার ৩১৯ জন। শিশু আট হাজার ৭৯০। ভাসানচরে এ পর্যন্ত জন্ম নিয়েছে ২৬০ রোহিঙ্গা শিশু।

কক্সবাজারের ক্যাম্পের ঘিঞ্জি ক্যাম্পের চেয়ে সেখানকার বসতি অনেক উন্নত মানের জানিয়ে ভাসানচর ৫৩ ক্লাস্টারের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম  বলেন, “আসলে ভাসানচর দেখতে আধুনিক শহরের মতো। সেখানে গড়ে তোলা অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভালো। এখানে আর বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের দুশ্চিন্তায় নেই আমরা। নিরাপত্তার পাশাপাশি শিশুদের জন্য মনোমুগ্ধকর পরিবেশ রয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির বাগান। আছে মহিষ পালন ও মাছ ধরার ব্যবস্থা।”
ভাসানচরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি গুচ্ছগ্রামের ‘ফোকাল’ (সমন্বয়ক) রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জুবাইর  জানান, “কক্সবাজারের শিবিরগুলোর ঘিঞ্জি পরিবেশ, বর্ষায় পাহাড় ধস-বন্যা, শিশুদের খেলার মাঠ নেই। আছে মারামারি, মাদক ও অপহরণের ঘটনা। কিন্তু ভাসানচরে এসব ঝামেলা নেই। ভাসানচর খোলামেলা সমতল জায়গা, ঘরগুলো অনেক সুন্দর, শিশুদের জন্য খেলার মাঠ আছে, চাষাবাদের সুবিধা আছে।”

‘তবে রোহিঙ্গা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করা এবং কেনাকাটার জন্য নোয়াখালী সদরে যাওয়ার সুযোগ চাই আমরা। সেটি পেলে হয়তো এখান থেকে রোহিঙ্গারা পালানোর চেষ্টা করবে না।’ 

সম্প্রতি সময়ে এখান থেকে পালানোর সময় ট্রলার ডুবিতে প্রাণ হারায় ১৩ জন রোহিঙ্গা, যোগ করেন তিনি।

আজ ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের জন্য কালো দিন। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে কোনও আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান রোহিঙ্গা সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) নেতা সৈয়দ উল্লাহ।

থমকে আছে প্রত্যাবাসন
সরকারি কর্মকর্তারা জানান, ১৬ বছর বন্ধ থাকার পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার চুক্তি সই করেছিল। এর পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রত্যাবাসন শুরু করতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন করা হয়। গ্রুপটির চতুর্থ ও শেষ বৈঠক হয় দুই বছর আগে মে মাসে মিয়ানমারের নেপিদোতে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে পঞ্চম বৈঠকটি করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ, মিয়ানমারের অভ্যুত্থান পরিস্থিতির কারণে তা হয়নি। ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট টেকনাফের শালবন ক্যাম্প থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও রোহিঙ্গারা জড়ো হয়ে ফিরে যেতে তাদের অনীহার কথা জানান। এভাবেই বহুল প্রত্যাশিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হোঁচট খায়। আগের বছরের ১৫ নভেম্বরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কথা ছিল। সেবারও রোহিঙ্গাদের আপত্তির মুখে তা শুরু করা যায়নি।


আরআরআরসি কার্যালয় জানায়, প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মিয়ানমারের কাছে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত পাঁচ ধাপে মোট পাঁচ লাখ ৯৭ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ওই বছরের শুরুতেই একসঙ্গে চার লাখ ৯২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দেওয়া হয়েছে। এসব তালিকা থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ১১ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফেরত নেওয়ার কথা বলেছিল, কিন্তু এখনও নেয়নি।

এদিকে ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে প্রথম থেকেই জাতিসংঘের আপত্তি ছিল। ফলে অনিশ্চয়তায় ছিল জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা। অবশেষে ভাসানচরে সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে জাতিসংঘ। দূর হয়ে গেছে সব মতভেদ। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভাসানচরে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে সংস্থাটি। সামনের সপ্তাহে এ নিয়ে চুক্তি হবে। 

উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি মাহমুদুল হক চৌধুরী  বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে এ সমস্যার টেকসই সমাধানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নয়তো বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে।

image
image

রিলেটেড নিউজ


২৮ সেপ্টেম্বর থেকে বিমানবন্দরে চালু হবে আরটি-পিসিআর টেস্ট

আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশগামী যাত্রীদের বিস্তারিত


ঘূর্ণিঝড় গুলাবের প্রভাবে সাগর উত্তাল

 বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’-এ পরিণত হওয়ায় সাগর উত্তাল বিস্তারিত


সংক্রমণ বাড়লে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে: শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, কাল রোববার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে। তবে বিস্তারিত


টিকা না পেয়ে ঢাকা মেডিক্যালের সামনে প্রবাসীদের বিক্ষোভ 

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে না পেরে বিক্ষোভ করেছেন বিস্তারিত


সিনোফার্মের ৫৪ লাখ টিকা এক চালানেই

চীনের সিনোফার্মের তৈরি আরও ৫৪ লাখ ডোজ টিকার চালান দেশে পৌঁছেছে। শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে বিস্তারিত


বড় বন্যার শঙ্কা নেই, কমছে পানি

চলতি বছর দেশে বড় বন্যার শঙ্কা নেই। বন্যাকবলিত সব এলাকার পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে। বিস্তারিত


নভেম্বর পর্যন্ত সপ্তাহে ৫০ লাখ টিকা আসবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

 আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে ৫০ লাখ করে করোনা ভাইরাসের টিকা আসবে বলে বিস্তারিত


বাংলাদেশকে ২ লাখ ৭০ হাজার টিকা উপহার দেবে বুলগেরিয়া

বাংলাদেশকে ২ লাখ ৭০ হাজার টিকা উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপের দেশ বুলগেরিয়া। দেশটির বিস্তারিত


এসএসসি পাসে পুলিশে কনস্টেবল পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

ট্রেইনি কনস্টেবল পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। জেলা অনুযায়ী শূন্যপদের বিস্তারিত


image
image

নামাজের সময়সূচি

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত

এক ক্লিকে বিভাগীয় খবর

আবহাওয়া

ক্যালেন্ডার

March 2017
M T W T F S S

চট্টগ্রাম বন্দরের সিডিউল

বিমান বন্দরের সিডিউল


Cities_image
Cities_image

জোয়ার ভাটা

Cities_image