মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি দেয়ার আগে করণীয় ফ্রী ভিসা নামক স্বপ্ননাশী মাদকের হাতছানি থেকে দূরে থাকুন
নুর মোহাম্মদ নুর জাগরণ ডট নিউজ
আপডেট: এপ্রিল ৩০, ২০১৯ ২০:২৫
বাংলাদেশে অনেক পরিবারের প্রসন্ন স্বপ্নযাত্রায় কল্পিত স্বপ্নঘেরা মানুষটির নাম “প্রবাসী”। একজন প্রবাসীর পিছনে খুব স্বাভাবিকভাবে বলা যায় একটি পরিবার নির্ভরশীল। সেই পরিবার যদি গড়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার হয় তাহলে সতের কোটি মানুষের দেশে পৃথিবীর অনাচে-কানাচে থাকা এক কোটি পঁচিশ লক্ষ প্রবাসীরা প্রায় সাড়ে ছয় কোটি মানুষের রুজি-রুটির একমাত্র উপার্জনকর্তা। এটা অনস্বীকার্য যে, বিদেশে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পাশাপাশি দেশের গ্রামীণ অঞ্চলগুলোর সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে।
কিন্তু অজানা সেই কল্পিত প্রবাসপথে সর্বত্র রয়েছে প্রতারণার ফাঁদ। জীবনের শেষ সম্বল বন্ধক-বিক্রি করে বা ঋণগ্রস্ত হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষকরে কাতারে আসার আগে বিশেষ সতর্ক অবলম্বন করবেন। দুবাই পাম (করতল) দ্বীপ বা কাতারের সমুদ্রপাড়ে নির্মিত গগনচুম্বী অট্টালিকার ছবি দেখে বিমোদিত হবার কারণ নেই। ছবির অদূরে মাটিতে পরিবেশ-পরিস্থিতি আরো অনেক উষ্ণ, কঠিন ও বালুময়। ভাসমান ভিসা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে “ফ্রী ভিসা” নামে "ঝুঁকিপূর্ণ মাদকের প্রবণতার" হাতছানি থেকে দূরে থাকবেন। নুরানী চেহেরা আর শ্রুতিমধুর কথাবার্তার কোন মানুষের স্রষ্ট একটি প্রলোভন আপনার, সাথে আপনার পরিবারের সবার জন্য সর্বনাশের কারণ হতে পারে।
কাতারে অনেক রহস্যময় ও ভাসমান ফ্রী ভিসার ব্যবসায়ী আছে যারা আবার ভিসা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে চেঁচিয়ে ভাষণ দেয়। কখনো কিছু আনাড়ি বা কখনো কিছু সূক্ষ্মবুদ্ধির কাতারিদের সহায়তায় অলীক-কল্পিত কিছু প্রতিষ্ঠান খুলে ভিসা বের করে শুরু হয় স্বপ্ন বিক্রির কারখানা। হাট-বাজারে, আনাচে কানাচে এসব ভিসা ব্যবসায়ীদের দাপটে ঠিকা মুশকিল। কিছুদিন কিছু কিছু অনুষ্ঠানে তাদের প্রযোজনায় ও পদাচারনায় মুখরিত থাকে। বিশেষ বিশেষণে, বিশেষ প্রবচনে আর বিশেষ আসনে তারা অতিবিশিষ্ট হয়ে উপবিষ্ট হয়। ভাসমান ভিসা ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ নিরক্ষর, পঠনাক্ষম, অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, আনাড়ি হলেও স্থানীয় কাতারিদের হাত-পা ধরে, মা-বাবা বলে, টাকা-পয়সার প্রলোভন দেখিয়ে ফ্রী ভিসাগুলো বের করে। অন্যদিকে তাদের অবৈধ উপার্জনের প্রভাবে ও প্রতাপে শিক্ষিত, যোগ্য, মার্জিত, সক্ষম, বিজ্ঞ মানুষগুলো পর্দার আড়ালে বা পর্দার পিছনের আসনে স্থান পায়। কিছুদিন পর শুনা যায় সেই তথাকথিত প্রতাপশালী এখন শ্রীঘরে বা মানুষের লক্ষ-কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে। নতুন করে স্থলাভিষিক্ত হয় অন্য কেউ। একান্ত কেউ নিজের আপনজনের মাধ্যমে ভিসা নিতে না পারলে পযাপ্ত যাচাই-বাচাই ছাড়া ভিসা নেবেন না।
ব্যক্তি মালিকানার কোন প্রতিষ্ঠানের ভিসা নেয়ার ক্ষেত্রে যা যা করণীয়ঃ-
যেই প্রতিষ্ঠানে আসবেন সেই প্রতিষ্ঠানের বয়সকাল কত জেনে নেবেন?
বছর-দুই বছর আগে প্রতিষ্ঠিত কোন প্রতিষ্ঠানে না আসার সুপারিশ থাকল।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের বাস্তব অস্তিত্ব আছে না কাগুজে প্রতিষ্ঠান এটি যাচাই করবেন।
বহুজাতিক মানুষ কাজ করে কিনা এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার ধরণ কি নিশ্চই জানবেন। যদি ঐ প্রতিষ্ঠানে শুধু বাংলাদেশী কাজ করে তাহলে বুঝতে হবে ডালমে কুচ কালা হে।
প্রতিষ্ঠানটি আদৌ চলমান বা বিদ্যমান কিনা, থাকলে নিবন্ধন নবায়ন আছে কিনা?
বিদ্যমান থাকলে সেই প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা কেমন?
উল্লেখিত সব তথ্য প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক নিবন্ধন বা সি আর কপিতে থাকে, ভিসা নেয়ার আগে আপনি সেই প্রতিষ্ঠানের একটি চলমান সি আর কপি চেয়ে নেবেন, এটি আপনার অধিকার। মনে রাখবেন এক কিলো টমেটো ক্রয় করার সময় আপনি বেছে বেছে নেন, একটি স্বপ্ন কেনার ব্যাপারে অতিশয় সচেতন হবেন, এটাই স্বাভাবিক।
এই লিংকে গিয়ে কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বের ব্যাপারে আরও একটু সমীক্ষা করে নিতে পারেন।
কাতারে নিবন্ধদিত হলে নিন্ম লিংকগুলোতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের নাম লেখে অনুসন্ধান করতে পারেন। যদি প্রতিষ্ঠানের নাম পেয়ে যান তাহলে ধরে নেয়া যায় মোটামুটি ঠিক আছে।
লেখকঃ সভাপতি বাংলাদেশ লেখক সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশন কাতার