শিরোনাম
মো. মাসুদ রানা, পাবনা জাগরণ ডট নিউজ
আপডেট: মে ২৬, ২০১৯ ১৬:৪৩
আধুনিক পোশাকের সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিয়ে এখনো মাথা উঁচু করে রয়েছে বাংলার আবহমান কালের ১২ হাতের শাড়ি।
যদি সেটা হয় বেনারসি, কাতান, জামদানি তাহলে তো কথাই নেই। তাইতো কথা বলার কিংবা কারো দিকে তাকানোর সময় নেই পাবনার ঈশ্বরদীর কারিগরদের।
ঈশ্বরদীর বেনারসি তাঁতপল্লির কারিগরদের এখন শাড়ি তৈরির ধুম লেগে গেছে। কারিগররা মহাব্যস্ত। ঈদের আগেই ক্রেতাদের হাতে পছন্দের শাড়িটি তুলে দিতে নির্ঘুম রাত পার করছেন তারা।
ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লিতে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছেন তারা, এখন যা আয় হবে এতে বছরের কয়েকমাস তাদের ভালোভাবে সংসার চলবে।
ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর জামান ট্রেক্সটাইলে ১৭ জন বেনারসি কারিগর আপন মনে যতœ করে বুনে চলেছেন এক একটি রং বেরঙের বেনারসি শাড়ি। দীর্ঘদিনের মন্দা কাটিয়ে তাঁতপল্লিতে ফিরে এসেছে প্র্রাণচাঞ্চল্য। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী তাঁত শ্রমিকেরা বাহারি ডিজাইনের শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ী এবং রমণীরা আসেন ঈশ্বরদীতে শাড়ি কিনতে।
এছাড়াও কলকাতাসহ অন্যান্য দেশে ঈশ্বরদীর বেনারসি শাড়ির ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রচুর অর্ডার আসছে।
বাহারি রঙ ও সুক্ষ্ম কাজের জন্য এবার ঈদে বিভিন্ন ধরনের কাতান শাড়ি গুরুত্ব পাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের শাড়ির অর্ডার থাকায় সেগুলো তৈরিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। তবে তাঁতপল্লির শ্রমিকরা জানান, বেনারসি পল্লীতে ক্যালেন্ডার মেশিন না থাকায় ঢাকার মিরপুর গিয়ে ক্যালেন্ডার পালিশ করতে হয়। আর এই পলিশ করতে প্রতি শাড়িতে অতিরিক্ত ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০ টাকা খরচ গুনতে হয় তাদের।
ঈশ্বরদীর তৈরি বেনারসি শাড়ি মিরপুরের শাড়ি বলে বিক্রি করে থাকেন ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটের শাড়ি ব্যবসায়ীরা।
ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর জাবেদ ব্রাদার্স এর মালিক জাবেদ হোসেন (৫০) জানান, ঈশ্বরদীতে ইপিজেড, পাটকলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এখন অনেকেই চাকরি করেন।
তবে অন্য পেশায় চলে যাওয়া বেশ কিছু বেনারসি শ্রমিক আবার পল্লীতে ফিরে এসে কাজ করছেন বলে ঈদের আগে ক্রেতার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এখন সময় বদলেছে, একজন বেনারসি শ্রমিক একটি শাড়ির কাজ করে সপ্তাহে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা আয় করে থাকেন।
বেনারসি কারিগর জাহাঙ্গীর (৪০) বলেন, দৈনিক ১০/১২ ঘণ্টা কাজ করে একটি শাড়ি তৈরি করতে সময় লাগে কারিগর ভেদে ২/৩ দিন। শাড়ি প্রস্তুত হলে তা বেনারসি পল্লির শো-রুমে ওঠানো হয়। সেখানে প্রতিটি শাড়ি সর্বনিম্ন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
আর কারিগর প্রতিটি শাড়ি প্রস্তুতের জন্য পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। সেই শাড়ি ২ হাজার থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়ে থাকে।
বেনারসি কারিগর রানা (৩০) বলেন, শাড়ি তৈরি করা ছাড়া আমরা আর কোনো কাজ পারি না বলেই দৈনিক ১২/১৪ ঘণ্টা কাজ করে সপ্তাহে দু’টি শাড়ি তৈরি করি।
শাড়ি তৈরির পর পারিশ্রমিক ২ থেকে আড়াই হাজার। এইটুকু যদি না হতো পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে দিন কাটাতে হতো। বছরে দু’টি ঈদ ও পূজার সামনে শাড়ির চাহিদা বাড়ে। এসময় কাজ করে বেশি আয় করা সম্ভব হয়।
জামান টেক্সটাইল এর নাসিম সরকার (৩৬) বলেন, কয়েক বছর আগেও ভারত-পাকিস্তান থেকে কাতান-বেনারসি চোরাই পথে বাংলাদেশে আনা হতো। এখন ঈশ্বরদীর তৈরি বেনারসি দেদারসে ভারত-পাকিস্তানে যাচ্ছে।
আগের চেয়ে অনেকগুন বেশি উন্নতমানের শাড়ি এখন ঈশ্বরদীতে তৈরি হচ্ছে। উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ঈশ্বরদীর তৈরি শাড়ি দেশের ব্যাপক চাহিদা মেটাতে পারবে।
ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লী্এস্টেট অফিসার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক জানান, ঈশ্বরদী শহরের ফতেহ মোহাম্মদপুরে অবস্থিত বেনারসি পল্লীর নিয়মিত তাঁতীদের পাশাপাশি বিভিন্ন বাসা বাড়িতে প্রত্যেকেরই নিজস্ব তাঁত রয়েছে।
এছাড়াও কয়েক হাজার শ্রমিক বিভিন্ন ধরনের শাড়িতে পুঁতি ও কারচুপির কাজে ব্যস্ত। এবারের ঈদে তাদের শুধুমাত্র একটিই টার্গেট কাতান ও বেনারসি।
কেউ আবার বিন্দিয়া কাতান, পিওর বেনারসি শাড়িতে বিশেষ কারুকাজ, আনারকলি, ও ফুলকলি ছাড়াও নেট কাতান, পিওর কাতান, বেনারসি জুট জামদানি, কুচি জামদানি, মাসরাইস কাতান, ওপেরা কাতান, লেহেঙ্গা শাড়ি, ও বিভিন্ন মানের থ্রি-পিস তৈরি করছেন।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ও ঈদের জন্য এখানকার শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করছেন। তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসন সব-সময় খোঁজ খবর রাখছেন আমরাও তাদের সুবিধা-অসুবিধার খোঁজ রাখছি।
২০০৪ সালের ১২ ডিসেম্বর ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর উদ্বোধন করা হয় ৯০টি পন্ট দিয়ে। উদ্বোধন এর পর ৮টি কারখানা চালু রয়েছে। অভিজ্ঞ শ্রমিকের অভাবে পল্লীর বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
যারা রয়েছে এখন তারাও দৈনিক ২০ থেকে ২৫টি উন্নত মানের শাড়ি তৈরি করে। শাড়ি তৈরির পর ঢাকার মিরপুর ও নারায়ণগঞ্জ এ পালিশ করার জন্য পাঠানো হয়। এতেই কারখানা মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এখানকার কারিগর, কারখানার মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
ঈদের আগেই তাদের নিদিষ্ট টার্গেট পূরণ করার জন্য পল্লীর বাইরে আরো প্রায় ৪শ’ বেনারসি কারখানায় ১ হাজার শ্রমিক দিন-রাত কাজ করছেন।
ঈশ্বরদীর ফতেহ মোহাম্মদপুর এলাকায় প্রত্যেকটি বাড়িতে বড়দের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের মেয়েরা কাজ করে চলেছে। কারোরই দম ফেলার ফুরসত নেই অথচ দীর্ঘ ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গড়ে ওঠেনি পূর্ণাঙ্গ কারখানা।
ঈশ্বরদীতে বেনারসি শিল্পের ওপর নির্ভর করে এই এলাকায় কয়েকটি শাড়ির দোকান ও শো-রুম গড়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে অর্থের অভাবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বন্ধও হয়ে গেছে।
ভুক্তভোগীরা মনে করেন, সরকারিভাবে পল্লীতে বেসিক সেন্টার, ক্যালেন্ডার মেশিন স্হাপন ও কারখানা মালিকদের পর্যাপ্ত সুদমুক্ত ঋণ না দেওয়া হলে ঈশ্বরদীর তথা দেশের দ্বিতীয় বেনারসি পল্লীটি হয়তো অচিরেই হারিয়ে যাবে।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশগামী যাত্রীদের বিস্তারিত
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’-এ পরিণত হওয়ায় সাগর উত্তাল বিস্তারিত
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, কাল রোববার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে। তবে বিস্তারিত
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে না পেরে বিক্ষোভ করেছেন বিস্তারিত
চীনের সিনোফার্মের তৈরি আরও ৫৪ লাখ ডোজ টিকার চালান দেশে পৌঁছেছে। শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে বিস্তারিত
চলতি বছর দেশে বড় বন্যার শঙ্কা নেই। বন্যাকবলিত সব এলাকার পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে। বিস্তারিত
আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে ৫০ লাখ করে করোনা ভাইরাসের টিকা আসবে বলে বিস্তারিত
বাংলাদেশকে ২ লাখ ৭০ হাজার টিকা উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপের দেশ বুলগেরিয়া। দেশটির বিস্তারিত
ট্রেইনি কনস্টেবল পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। জেলা অনুযায়ী শূন্যপদের বিস্তারিত
© Copyright JAGORON.NEWS
Developed By Muktodhara Technology Limited