ফলোআাপ: জনপ্রিয়তা ও ভূমি বিরোধে আলমগীর সিকদার খুন?

নুরুল কবির, বান্দরবান জাগরণ ডট নিউজ

আপডেট: জুলাই ২৫, ২০১৯ ১৪:২১

​খামার বাড়ি হতে বাড়িতে ফেরার পথে ওঁৎপেতে থাকা সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে বান্দরবানের লামা উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মো. আলমগীর সিকদার (৪২) কে।  অধিক জনপ্রিয়তা ও ভূমি বিরোধকে এই ঘটনার নেপথ্যের কারণ হিসেবে দেখছেন নিহতের ছোট ভাই মো. দস্তগীর সিকদার মানিক।

তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি আমার বড় ভাই এলাকায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছিলেন।  আগামী ইউপি নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন করার কথা ছিল। এছাড়া সরই আলাদা উপজেলা হলে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার আশা ব্যক্ত করেছিলেন। তাকে সরিয়ে দিতে পারলে অনেকের রাস্তা পরিস্কার হবে এই ধারনা থেকে হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড করা হয়েছে বলে আমাদের ধারনা।

তিনি বলেন, আমাদের বিশাল ভূ-সম্পত্তি বিষয়ে কয়েকজনের সাথে বিরোধ রয়েছে।  সেটাও খুনের কারণ হতে পারে। আমাদের ধারনা খুনিরা ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী ছিল। তবে এই হত্যাকান্ডের পিছনে অনেক রাঘোববোয়ালরা জড়িত থাকতে পারে। আমি ভাই হত্যার বিচার চাই ও খুনিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি করছি।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টায় লামার সরই ইউনিয়নের পূর্ব হাসনাভিটা এলাকার ফাতেমা দরগাহ নামক স্থানে আলমগীর সিকদারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।  

​নিহত মো. আলমগীর সিকদার লামা উপজেলার সরই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সরই ইউনিয়নের সাবেক ৩ বারের ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলী সিকদারের বড় ছেলে।  খুনের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যকর অবস্থা বিরাজ করছে।

এদিকে বুধবার (২৪ জুলাই) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন লামা-আলীকদম সেনা জোনের জোন কমান্ডার লে. কর্ণেল সাইফ শামীম পিএসসি ও বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলী হোসেন (ডিএসবি)।  

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লোকালয়ের পাশে এমন হত্যাকান্ড ঘটনার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিষয়টি তদন্তনাধীন।  মো. আলমগীর সিকদার কেন খুন হলেন তা এখনো বুঝা যায়নি। খুনের কিছু মোটিভ ও ধারনা আমরা পেয়েছি।  শীঘ্রই আমরা দোষীদের আইনের আওতায় আনতে পারব। এই ঘটনায় সন্দেহজনক একজনকে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশের হাতে দিয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আটক ব্যক্তি একাধিক পরিচয় দেয়ায় তার আসল ঠিকানা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সে তার নাম মংচিং মার্মা আবার মংথোয়াই মার্মা বলে জানায়।  আটক ব্যক্তি জানান তার বাড়ি আলীকদম উপজেলায়।    

​নিহতের স্ত্রী পারভীন আক্তার মুন্নি কান্নারত অবস্থায় বলেন, এই ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত।  আমার ২ ছেলে ও ১ মেয়েকে যারা এতিম করেছে আল্লাহ তাদের বিচার করবে।  এমন সময় খুনিরা আমার স্বামীকে খুন করল যখন আমার শ্বশুড়-শাশুড়ি হজ্ব পালনে দেশের বাইরে আছেন। আমার স্বামীরা ২ ভাই ও ২ বোন।

​স্থানীয় বাসিন্দা আকবর আহমদ বলেন, রাত সাড়ে ৯টায় আমরা তিনজন ব্যক্তিকে মোটর সাইকেল নিয়ে রাস্তার মাথায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম। তাদের মধ্যে দুইজনের মাথায় হেলমেট ও অন্ধকার থাকায় কাউকে চিনতে পারিনি। অতি জনপ্রিয়তা, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও ভূমি বিরোধ তার জন্য কাল হয়েছে।

সরই ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ উল আলম বলেন, বুধবার দুপুর ১২টায় লাশ বান্দরবান জেলা সদর হাসপাতাল হতে ময়নাতদন্ত শেষ করে নিজ বাড়িতে আনা হয়েছে। তার নিজ বাড়ি পার্শ্ববর্তী লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের নয়া বাজার এলাকায়।  বিকাল ৫টায় গৌরস্থান উচ্চ বিদ্যালয়ে তার জানাজা শেষে বাড়ির পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে কবর দেয়া হবে। মাথার পিছনে ঘাড়ে কোপ দিয়ে তাকে খুন করা হয়। তারপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাকে দা দিয়ে জবাই করা হয়েছে। এছাড়া মাথার উপরের অংশে আরো ৩টি দায়ের কোপ রয়েছে। এই ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

সরই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) মো. কাসেম আলী বিশ্বাস বলেন, ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা নিহত মো. আলমগীরের মোটর সাইকেল ও খুনের কাজে ব্যবহৃত আরেকটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করে আমরা আমাদের হেফাজতে রেখেছি। ঘটনাস্থলে পাওয়া খুনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি দা আমরা মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করেছি।  

লামা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জামাল বলেন, রাতেই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। নিহতের পরিবারকে সান্তনা দেয়ার ভাষা আমাদের জানা নেই।

লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, খুনের প্রত্যেকটি আলামত ও মোটিভ মাথায় রেখে আমরা তদন্ত করছি। আশা করি খুব শীঘ্রই আমরা রহস্য উৎঘাটন করতে সক্ষম হব। এই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।