চাল নিয়ে শঙ্কীত ব্যবসায়ীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক জাগরণ ডট নিউজ
আপডেট: অক্টোবর ২৩, ২০১৯ ২০:২৫
চালের দাম গত সপ্তাহে গড়ে ৫ শতাংশ কমেছে। এতে দেশের বাজারে বর্তমান দর গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। চালের দাম কমে আসায় ক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি থাকলেও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক।
চালের দাম তলানিতে ঠেকায় লোকসানে পড়েছেন কৃষক। এ পরিস্থিতিতেই ঘনিয়ে আসছে আমন মৌসুম। তাই এবার নতুন ধানের দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা।
চাল ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে মোটা চাল ২৫ টাকা, মাঝারি ৩২ ও সরু চাল ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আরো জানান, উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় চালের সরবরাহ বাড়ছে। এবার বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। তা ছাড়া আমন মৌসুম ঘনিয়ে আসায় কৃষক চাল বিক্রি বাড়িয়েছেন।
এতে বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে উদ্বৃত্ত চাল রপ্তানির সুযোগ চান মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা। তবে বাজার বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্ববাজারে চালের দাম কম থাকায় রপ্তানির সুযোগ কম।
এ ক্ষেত্রে মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ বাড়াতে পারে সরকার। পাশাপাশি কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কমাতে সহায়তা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তারা।
বর্তমানে দেশের বাজারে খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল গুটি ও স্বর্ণা ২২ থেকে ২৭ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তা ছাড়া বিআর-২৮ ও লতাসহ অন্যান্য মাঝারি মানের চাল ৩০ থেকে ৩৫ এবং মিনিকেটসহ অন্যান্য সরু চাল ৪১ থেকে ৪৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে রাজধানীর খুচরা বাজারে কেজিতে দু-এক টাকা ব্যবধান রয়েছে। এই বাজারে নাজিরশাইল চাল ৫২ থেকে ৬০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার বাইরে চালের দাম বেশ
এখন অনেক উদ্বৃত্ত থাকায় ধান ও চালের দাম পাচ্ছেন না। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন খারাপ। তিনি কৃষককে ধান ও চালের ন্যায্য দাম দিতে চান। এ জন্য কী করা যায়, প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন। আমরাও ভাবছি। সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো কাজ করছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তথ্য অনুযায়ী, এখন চালের দাম বেশ কম। তবে গত বছর চালের গড় দর ছিল গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তখন প্রতি কেজি চাল মোটা ৪৪ টাকা, মাঝারি ৪৭ ও সরু ৫৯ টাকা ছিল।
বোরো ধান ওঠার আগে আকস্মিক বন্যার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় এই দর বৃদ্ধি পেয়েছিল। এতে গত বছর মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ ও সরু নাজিরশাইল চালের দর ৭০ থেকে ৭২ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। তবে ২০১৭ সালে গড় দর ছিল মোটা চাল ৪০ টাকা, মাঝারি চাল ৪৬ ও সরু চাল ৫৩ টাকা।
আগের দুই বছর ২০১৫ ও ২০১৬ সালে চালের দাম কিছুটা কম ছিল। এ দুই বছর কেজিপ্রতি গড় দর মোটা ২৯ টাকা, মাঝারি ৩৬ ও সরু ৪৪ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চালের গড় দর ছিল মোটা ৩০ থেকে ৩৩, মাঝারি ৩৫ থেকে ৪০ ও সরু ৪৩ থেকে ৪৬ টাকা কেজি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় মোটা চাল প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ২৮ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর তখন সরু চাল সর্বনিম্ন ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ টাকায় পাওয়া গেছে।
জানা যায়, এবার বোরো মৌসুমে কৃষক ৪৭০ থেকে ৪৮০ টাকা দরে ধান বিক্রি করেছেন। ফলে লোকসান দিয়ে তাদের ধান বিক্রি করতে হয়েছে। এদিকে, বর্তমানে মিলগেটে প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২১ টাকা, মাঝারি চাল ২৭ থেকে ২৯ ও সরু চাল ৩৮ থেকে ৪০ টাকায়। পাইকারি বাজারেও কম দামে বিক্রি হচ্ছে চাল।
কৃষকদের প্রণোদনা দিয়ে রপ্তানি চালু হলে এ সমস্যা সমাধান হবে বলে মনে করেন বাজার বিশেষজ্ঞরা । বাজার বিশেষজ্ঞরা আমন মৌসুম প্রসঙ্গে বলেন, এবার আমনেও বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে রপ্তানির বাজার খুঁজতে হবে।