শঙ্কায় জিএম কাদের নেই রওশন
নিজস্ব প্রতিবেদক জাগরণ ডট নিউজ
আপডেট: অক্টোবর ২৬, ২০১৯ ১৮:০২
দেশে গত এক মাসের বেশি সময় ধরে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। জাতীয় কোনো ইস্যুতেই বিরোধী দলকে ও দলের নেতার কোনো কার্যক্রম জনগণের দৃষ্টি গোচর হচ্ছেনা।
১১ দফা দাবিতে ক্রিকেটারদের ধর্মঘট, মহানবিকে (দ.) নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তিকে কেন্দ্র করে ভোলায় হতাহতের ঘটনা, বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের পিটিয়ে হত্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্প্রতি ভারত সফরে চুক্তি-সমঝোতা স্বাক্ষর,চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অভিযান-টেন্ডারবাজি-ক্যাসিনো। এতগুলো ইস্যু কিন্তু বিরোধীদল নিশ্চুপ।
নিন্দা, প্রতিবাদ কিংবা সমর্থন জানিয়েও তিনি কোনো বক্তব্য-বিবৃতি দেননি। দলীয় কোনো কার্যক্রমেও তাকে দেখা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে কোনো কিছুতেই নেই বিরোধীদলীয় নেতা। এ নিয়ে শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনেই নয়, খোদ জাতীয় পার্টির (জাপা) ভেতরেও দলীয় নেতাকর্মীরা নিজেদের আড্ডা-আলোচনায় প্রশ্ন তুলছেন।
অন্যদিকে আগামী ২৮ ডিসেম্বর দলের জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে অঙ্গ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোকে গোছানোর কাজ করছেন জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে তিনি মতবিনিময় করছেন।
এর মধ্যেও কাউন্সিলে ‘চেয়ারম্যান’ পদ ধরে রাখতে পারা নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা তাড়া করছে তাকে। কারণ কাউন্সিলকে সামনে রেখে দলের নিয়ন্ত্রণ ও নেতৃত্বের প্রশ্নে জাপার ভেতরে নতুন করে দ্বন্দ্ব-বিবাদ দানা বাঁধছে।
দেশে যে একজন বিরোধীদলীয় নেতা রয়েছেন, সামগ্রিক রাজনৈতিক দৃশ্যপটে সেটি অনুপস্থিত। শুধু সংসদে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ, বাজেট আলোচনা ও রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সংসদে বক্তব্য রাখা এবং রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদের অধিবেশনের সমাপনী দিনে বক্তব্য রাখা ছাড়া বিরোধীদলীয় নেতার আর কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়।
এদিকে এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর জাপার নিয়ন্ত্রণ ও নেতৃত্বের প্রশ্নে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের অনুসারী পৃথক দুটি বলয়ের মধ্যে বিরোধ সম্প্রতি তুঙ্গে ওঠে। একপর্যায়ে রওশনকে দলের পালটা চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হলে দল ভাঙনের মুখে পড়তে গিয়েও শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যরাতের সমঝোতায় সেই দফায় দল আবারও টুকরো হওয়া থেকে রক্ষা পায়।
জাপার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘সমঝোতা অনুযায়ী দলের কাউন্সিল পর্যন্ত জি এম কাদের দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন’—এই বাক্যটির মধ্যে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি রয়েছে।
দুই পক্ষের সমঝোতা অনুযায়ী রওশন এরশাদ সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা এবং জি এম কাদের দলের চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা হলেও দলটিতে দেবর-ভাবীকে ঘিরে গড়ে ওঠা দুটি বলয়ের মধ্যে বিবাদরেখা এখনও বিদ্যমান।
প্রকাশ্য বিবাদ না থাকলেও পৃথক বলয়ে থাকা নেতারা আগের মতোই বিভাজিত। বরং রওশনের সঙ্গে বিরোধের সময় যারা জি এম কাদেরের পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছিলেন তাদের অনেকেই বর্তমানে দলীয় কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়।
রওশন ও জি এম কাদেরের বলয়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাউন্সিলকে সামনে রেখে দলের একটি অংশের ভিন্ন পরিকল্পনাও রয়েছে। রওশনকে দলের চেয়ারম্যান, জি এম কাদেরকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও রওশনপুত্র সাদ এরশাদকে কো-চেয়ারম্যান করার চিন্তা-ভাবনা নিয়ে নিজেদের মধ্যে মাঝে-মধ্যেই আলোচনা করছেন এই নেতারা।
তবে এই পরিকল্পনা সম্পর্কে জি এম কাদেরের অনুসারীরাও অবগত। ভিন্ন এই পরিকল্পনাকে বিবেচনায় রেখে কাদেরপন্থিরাও কাউন্সিলে নিজেদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
যদিও জি এম কাদেরের দাবি, জাপা ভাঙবে না। জাপার নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। জাপা হবে কর্মীদের দল, দুই-চার জন নেতার দল হবে না। তিনি জানান, কাউন্সিলের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।