সিসিটিভি ক্যামেরা স্পিড সেন্সর বসবে মহাসড়কে !
নিজস্ব প্রতিবেদক জাগরণ ডট নিউজ
আপডেট: অক্টোবর ২৭, ২০১৯ ১৪:২৪
সড়কে অপ্রত্যাশিত কোন ঘটনা সম্পর্কে আগেভাগে জানতে বা সড়কে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থা থাকে যার সাথে সমন্বয় রেখে কাজ করে পুলিশ, উদ্ধারকর্মী, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সবাই।
বাংলাদেশেও এরকম একটি ব্যবস্থা চালু করার জন্য একটি পাইলট প্রকল্পের ব্যাপারে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে।
যে ব্যবস্থা চালু করার ব্যাপারে কথাবার্তা হচ্ছে সেটি হল 'ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম'। এই প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ব্যাখ্যা করছিলেন বিষয়টি আসলে কী?
তিনি বলেন, এর মূল উদ্দেশ্য হল দেশের সকল সড়ক মহাসড়ক প্রযুক্তির মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা যাতে কোন ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে সেটি জানা ও দেখা যায় এবং ব্যবস্থা নেয়া যায়।
যেমন এখন কী হচ্ছে? হাইওয়েতে একটা দুর্ঘটনা ঘটলো। এটার খবর নিকটবর্তী থানা, হাইওয়ে পুলিশ বা হাসপাতালে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগে।
এর ফলে দুটো জিনিস ঘটে। একটি হল দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের চিকিৎসায় দেরি হয় এবং ওই দুর্ঘটনার কারণে মহাসড়কে বিশাল লম্বা যানজট তৈরি হয়ে যায়।
একটা কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক যদি নজরদারি চলে তাহলে সাথে সাথে ঘটনা জানা যাবে ও ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
যেমন - সারাদেশের মহাসড়কজুড়ে হাজার হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। গাড়ির গতি পরীক্ষার জন্য থাকবে গতি নির্ধারক সেন্সর-যুক্ত ক্যামেরা।
সেগুলো থেকে যে ছবি ও তথ্য আসবে তা কেন্দ্রীয় ব্যবস্থায় পর্যবেক্ষণ হবে। নানা যায়গায় বার্তা সম্বলিত ডিজিটাল বোর্ড বসানো হবে।
গতি নির্ধারক সেন্সর-যুক্ত ক্যামেরা যা জানতে পারবে যেমন কোন গাড়ি কত গতিতে অতিক্রম করছে ক্যামেরার বার্তা ছবিসহ চলে যাবে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে।
তিনি আরো বলেন, যেমন কোন গাড়িটা কোনদিকে যাচ্ছে, কত গতিতে যাচ্ছে, আইন ভঙ্গ করছে কিনা, প্রতি ঘণ্টায় কতগুলো গাড়ি একটি এলাকা দিয়ে গেলো সেসব তথ্য রেকর্ড হতে থাকবে।
ভেহিকেল ডিটেকশন সিস্টেম থাকবে। অর্থাৎ কোন ধরনের গাড়ি, তার আকার ও তা কত লোক বহন করছে সেটা ডিটেক্ট করা যাবে।
উন্নত বিশ্বে লাইসেন্স নম্বরের ছবিসহ জরিমানার চিঠি পাঠানো হয় চালকদের। সেরকম ব্যবস্থা এখানে করার কথা ভাবা হচ্ছে যাতে করে আইন ভঙ্গ করার বিষয়ে চালকরা সাবধান হন।
পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের এসব তথ্য হাইওয়ে পুলিশও ব্যাবহার করবে মহাসড়কে নানা ধরনের অপরাধ দমনে।
একই ক্যামেরা সব ধরনের ঘটনাকে ডিটেক্ট করতে পারছে। যা অপরাধ দমনে ব্যবহার করা যাবে।
সাধারণ জনগণের উপরও নজরদারির সুযোগ থাকছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে নতুন এই পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাকে ঘিরে। তবে সেই সুযোগকে কীভাবে কাজে লাগানো হবে তা পরিষ্কার নয়।
তিনি বলেন, সামনে যানজট আছে কিনা, দুর্ঘটনা হয়েছে কিনা, গাড়ির গতি কমানোর, বিকল্প সড়ক ব্যবহারের নির্দেশনা আছে কিনা,
গুগল ম্যাপের মতো সবচেয়ে ভালো সড়ক সম্পর্কে তথ্য, পৌঁছানোর সম্ভাব্য সময় এমনকি আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্যও থাকবে।
সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে যে তথ্য আসবে সেটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে অগ্রিম বার্তা হিসেবে ডিজিটাল বোর্ডে চলে আসবে। এসব বিষয় জানাতে ডিজিটাল বোর্ড ছাড়াও মোবাইল অ্যাপ চালু করা হবে।
আপাতত একটি পাইলট প্রকল্প চালু করার জন্য বাংলাদেশ কোরিয়ান সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে। কোরিয়া থেকে একটি দল একবার এসে এর সম্ভাব্যতা যাচাই করে ইতিবাচক উত্তর দিয়েছে।
কোরিয়ান সরকারের অনুদানে হবে এই পাইলট প্রকল্প যার জন্য আপাতত ৯০ কোটি ডলার দিচ্ছে তারা।
প্রযুক্তি ও প্রকৌশলগত দিক দিয়েও তারাই সহায়তা করবে। এব্যাপারে আরও কথা বলতে দক্ষিন কোরিয়া থেকে আর একটি দল আজ রবিবার (২৭ অক্টোবর)আসছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পর্কে নানা দিক আলোচনায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাদের বাংলাদেশে থাকার কথা। তবে এই সফরেই কিছু চূড়ান্ত হবে কিনা সেটি নিশ্চিত নয়।
আগামী বছর থেকে পাইলট প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু করার আশা করছে সরকার। কোন কিছুই এখনো চূড়ান্ত না হলেও সারা দেশে সুফল পেতে দশ বছরের মতো লেগে যেতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
শুনতে বেশ গালভরা মনে হচ্ছে বিশেষ করে যানবাহন ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে। সড়কে রয়েছে নানা ধরনের ছোট ও কম গতির বাহন।
মহাসড়কের পাশে রয়েছে ব্যস্ত বাজার, চালকদের বেপরোয়া মনোভাব, পথচারীদের জন্য ব্যবস্থার অভাব এই সবকিছু মিলিয়ে দেশের যানবাহন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।