অভিনব কায়দায় মায়ের কোল থেকে শিশু চুরি, গ্রেফতার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক জাগরণ ডট নিউজ

আপডেট: নভেম্বর ৩, ২০১৯ ২২:৪৪

নগরীতে অভিনব কায়দায় মায়ের কোল থেকে শিশু চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। শিশুর মা শেফালী বেগম ভিক্ষা করে যে টাকা পান সে টাকা দিয়ে নিজে এবং তার আদরের শিশু সন্তানকে লালন পালন করে আসছিল।

নগরীর কাজির দেউড়ি এলাকায় গত ২৬ মে অপরিচিত এক যুবক ভিক্ষারী শিশুর মাকে তার শিশু সন্তানকে কাপড় কিনে দেওয়ার আগ্রহ করেন এবং পরদিন ২৭ মার্চ কাজির দেউড়ি মোড়ে এসে শিশু সন্তান মোহাম্মদ আলীকে কাপড় ক্রয় করে দেওয়ার কথা বলে মা শেফালী বেগমকেসহ শিশু সন্তানকে নিয়ে রিকশায় যুবক অপর একটি নিয়ে জুবলী রোডের তিনপুলের মাথায় চলে আসে। শিশুর মা নগরীর চৈতন্যগলিস্থ এক হোটেলে নাস্তা করে আমতলার দিকে আসার পথে যুবক থেকে  টাকা ১০০ টাকা নিয়ে ছেলের জন্য একটি জামা কিনে নেন।

ঐদিন বিকেলে আমতল জুবিলী রোডস্থ হোটেল সাফিনার সামনে দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় মহিলা শেফালী বেগমের  বমি আসলে যুবকটি মহিলাকে একটি পানির বোতল কিনে দেয়।

মহিলা বোতল থেকে পানি পান করার পর ঐ লোকের কাছে মহিলার শিশু সন্তানকে রেখে হোটেল সফিনা মার্কেটের দোতলার টয়লেটে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে এসে দেখে শিশু সন্তানকে নিয়ে যুবকটি পালিয়ে যায়।  
এ ঘটনায় নগরীর কোতোয়ালী থানায় গত ২৮ মে একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের শিশু চুরি সিন্ডিকেটের প্রধান মো. আফসার প্রকাশ জাফর সাদেক (৩৫) কে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার বিকেলে কক্সবাজারের কলাতলী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী মো. আফসার প্রকাশ জাফর সাদেক (৩৫) দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শিশু বাচ্চা চুরি সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য পারভীন আকতার (৩০) এর কাছে বাচ্চা বিক্রয়ের আগ পর্যন্ত লালন পালন করার জন্য রাখেন। পারভিন আকতারকে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন অক্সিজেন সৈয়দ পাড়া এলাকা শনিবার রাতে কোতোয়ালী থানা পুলিশ গ্রেফতার করেন। প্রধান আসামী মো. আফসার প্রকাশ জাফর সাদেক (৩৫) বাচ্চা চুরির পর চোরাইকৃত বাচ্চাগুলো সুজিত কুমার নাথ (৪৫) এর মাধ্যমে বিক্রি করা হয়।

রবিবার দুপুরে নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন ন্যাশনাল হাসপাতালের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাদেও জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে চুরি যাওয়া শিশু সন্তান মোহাম্মদ আলীকে নগরীর দামপাড়া পল্টন রোড এলাকার পবন কান্তি নাথ (৪২) এর বাসা থেকে রবিবার উদ্ধার করা হয়।
পুলিশকে জাফর সাদেক (৩৫) জানিয়েছে গত ১০/১২ বছর ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেলের বিপরীতে বেসিক ল্যাবে চাকুরি করিত এবং বিভিন্ন হাসপাতালে ঘোরাফেরা করেন। কাজ করার সুবাদে বিভিন্ন ওয়ার্ডের ডেইলি বেসিস আয়া ও হাসপাতালের বিভিন্ন ল্যাবের লোকজনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। চিকিৎসার জন্য আসা অনেক নিঃসন্তান ব্যক্তি যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত অথবা অন্য কোন কারনে পরবর্তীতে সন্তান ধারণ ক্ষমতা হারিয়েছেন এমন নিঃসন্তান দম্পতি বাচ্চা দত্তক নেওয়ার জন্য হাসপাতালের আয়া অথবা বাহিরের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিকের নিম্নপদস্থ লোকদের শরণাপন্ন হয়। বাচ্চা দত্তক নিতে পারিলে নিঃসন্তান দম্পতিরা সাধ্যমত খুশি করিবে বলিয়া জানায়।

মো. আফসার প্রঃ জাফর সাদেক (৩৫) বিষয়টি মাথায় নিয়ে, প্যাথলজীর বিভিন্ন টেকনিশিয়ানদের যোগাযোগ করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বাচ্চার ব্যবস্থা করেন বলে জানায়। আফসার একজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দালাল।  

এর আগে উক্ত ঘটনায় জড়িত ইকবাল হোসেন এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজে ইকবালকে সনাক্ত করা গিয়েছিল। ইকবাল হোসেন আদালতে বাচ্চা চুরি চক্রের মূল হোতা মো. আফসার প্রঃ জাফর সাদেক (৩৫) এর বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন এর সূত্রধরে পুলিশ বাাফকী আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।

প্রধান আসামি অসার প্রঃ জাফর সাদেক (৩৫), চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকার পূর্ব গাটিয়া মৃত আব্দুস সোবহানের পুত্র। পারভীন আকতার (৩০), অক্সিজেন শহীদ নগর এলাকার আবুল বশরের স্ত্রী। সুজিত কুমার নাথ (৪৫), পটিয়া উপজেলার গৈড়লা এলাকার অনন্ত মোহন নাথের পুত্র। বর্তমানে ন্যাশনাল হাসপাতালে কর্মরত।

কোতোয়ালী থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহসীনের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান, এসআই মোহাম্মদ আইয়ুব উদ্দিন, এএসআই নজরুল ইসলাম, এএসআই নাছের আহম্মেদ শাহআলমসহ পুলিশের একটি টিম টানা কয়েক দিনের অভিযানে আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি মোহাম্মদ মহসিন।