উইকেটরক্ষক রিশাভ পন্তে’র বারংবার ভুল এবং অধিনায়ক রোহিত শর্মার ক্যাচ মিসের পরেও ব্যাটিং পিরামিড ভারতকে বড় লক্ষ্য দিতে পারল না টিম বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টি২০ তে জয় দিয়ে সিরিজে ফিরেছে ভারত। প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে যে দাপুটে বাংলাদেশকে দেখা গিয়েছিল দ্বিতীয় ম্যাচে তেমনি অবলিলায় ধরা দিয়েছে।
ব্যাটম্যানেরা ৩০ এর ঘরেই ঘুরপাক খেলেন। সৌম্য সরকার, নাইম শেখ, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন ধ্রুবের ব্যাটে অর্ধশতক দূরে থাক ৪০ রানও কারও ব্যাটে দেখা গেল না। ২০ ওভারে টাইগারদের সংগ্রহ দাঁড়াল ৬ উইকেটে ১৫৩ রান।
২৬ বল বাকি থাকতেই লক্ষ্য ছুঁয়ে ৮ উইকেটের উদ্ভাষিত জয়ে সিরিজে ১-১ এ সমতা আনে ভারত।
রোহিত শর্মা ৪৩ বলে নিজের শততম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে খেলেছেন ৮৫ রানর প্রলংকারী ইনিংস। অধিনায়ক রোহিতের এই ইনিংসে আছে সমান ছয়টি করে চার এবং ছয়ের মার। আর শিখর ধাওয়ান ২৭ বল থেকে সংগ্রহ করেছেন ৩১ রান। ওপেনিং জুটিতে তারা দলকে দিয়েছেন ১১৮ রান। রাহুল অপরাজিত ছিলেন ৮ রানে ও শ্রেয়াস ২৩ রানে। বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে দুটি উইকেটই নিয়েছেন তরুণ লেগি আমিনুল ইসলাম বিপ্লব।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) টস হেরে ব্যাটিংয়ে শুরুটা দুর্দান্ত করেও নিজের ইনিংসটি টেনে নিতে পারেননি লিটন দাস। ২১ বলে ২৯ রানে ফিরেছেন রিশাবের থ্রো তে রান আউট হয়ে। ও ভালো কথা। এর আগেও একবার আউটের আবেদন উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। কিন্তু রিশবের গ্লাভস স্ট্যাম্পের আগে চলে এলে বেঁচে যান এই ওপেনার।
যুজবিন্দ্র চাহালের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে অনেকটা বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়েছিলেন লিটন। কিন্তু তার ব্যাট বলের নাগাল পায়নি। অনায়াসে স্ট্যাম্পিংয়ে সুযোগ পান রিশব। বল ধরে বেলস ফেলে দিলে লিটন হাঁটা দিয়েছিলেন ড্রেসিং রুমের দিকে। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা গেল, ধরার সময় পান্তের গ্লাভসের সামান্য অংশ ছিল স্টাম্পের সামনে! তখন তার রান ১৭।
পরের ওভারেই আরেকবার জীবন পান লিটন। ওয়াশিংটন সুন্দরকে স্লগ সুইপ খেলে বল তুলে দেন আকাশে। ছুটে এসে তা তালুবন্দি করতে চেয়েছিলেন রোহিত শর্মা। কিন্তু ক্যাচ নিতে পারেননি। এমন দু দুটি সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। নামের পাশে আর মাত্র ১২ রান যোগ করে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
আরেক ওপেনার নাইম শেখও ১১তম ওভারে ওয়াশিংটন সুন্দরকে স্লগ সুইপ করে বল উঠিয়ে দেন ডিপ মিড উইকেটে। সেখান থেকে তা ক্যাচে পরিণত করেন শ্রেয়াস আইয়ার। ৩১ বলে ৩৬ রানে থেমে যায় নবাগত নাইমের ইনিংস।
যুজবিন্দ্র চাহাল বলে মাত্র ৪ রানে ক্রুনাল পান্ডিয়ার হাতে ধরা পড়েন মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশর সংগ্রহ তখন ৯৭ রান। ওই ওভারের একেবারে শেষ বলে সৌম্য সরকারকে ৩০ রানে স্ট্যাম্পড করেন রিশব।
সৌম্যর বিদায়ে উইকেটে এলেন আফিফ। মাহমুদউল্লাহ ও আফিফের ব্যাটে বাংলাদেশও বড় সংগ্রহের স্বপ্নে বিভোর ছিল। সেই স্বপ্ন চকিতেই ভেঙে দিলেন খলিল আহমেদ। ১৭ তম ওভারে ব্যক্তিগত ৬ রানে তুলে দিলেন রোহিম শর্মার বিশ্বস্ত তালুতে।।
আফিফের বিদায়ে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়ে একাই ভারত বোলারদের শাসন করে যাচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু ১৯তম ওভারে এসে তিনিও হার মানলেন। দিপক চাহারের এক্সট্রা বাউন্সার বলটি খেলতে থার্ড ম্যান থেকে তা লুঅেফ নেন শিভাম দুবে। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত অপরাজিত থাকেন ৭ রানে। আর আমিনুল ইসলাম বিপ্লব অপরাজিত থাকেন ৫ রানে।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই টাইগার বোলারদের উপর চড়াও রোহিত শর্মা। মোস্তাফিজুর রহমানের প্রথম ওভার থেকে শিখর ধাওয়ান নেন ৯ রান। এরপর থেকেই যেন ব্যাট হাতে জ্বলে উঠলেন ভারতীয় অধিনায়ক। পঞ্চম ওভারে বল হাতে আসেন কাটার মাস্টার; তবে তার এক ওভার থেকেই ১৫ রান তুলে নেন রোহিত। পরের দুই ওভারে আল-আমিনের ওভার থেকে আসে ১১ এবং শফিউল ইসলামের ওভার থেকে আসে ১৫। এতেই প্রথম পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই স্কোরবোর্ডে অর্ধশতক রান তোলে স্বাগতিকরা।
ইনিংসের ৮ম ওভারেই নিজের ১০০তম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা রোহিত শর্মা তুলে নেন ১৮তম অর্ধশতক। ২৩ বলে ৬টি চার এবং ৩টি ছয়ে অর্ধশক তুলে নেন ভারতীয় অধিনায়ক।
১১তম ওভারে বল করতে আসেন টাইগার লেগি আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। ওভারের ৫ম বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে শট খেলতে যান শিখর ধাওয়ান। আর এতেই মিস হয়ে যায় ব্যাট-বল; সোজা গিয়ে আঘাত হানে স্ট্যাম্পে। আর এতেই ১১৮ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ভারতের। আউট হওয়ার আগে ২৭ বলে ৩১ রানের ইনিংস খেলেন শিখর ধাওয়ান।
ইনিংসের ১৩তম ওভারে আবারও বিপ্লবের হাতে বল তুলে নেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। এবার বল হাতে নিয়ে ওভারের প্রথম বলেই তুলে নেন ভয়ংকর রোহিতের উইকেট। মিড অন দিয়ে সজোরে ওভার বাউন্ডারির উদ্দেশ্যে ব্যাট হাঁকিয়েছিলেন ভারতের অধিনায়ক। তবে বাউন্ডারির ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মোহাম্মদ মিঠুনের হাতে গিয়ে পড়ে বল। এতেই ৮৫ রানের দারুণ এক ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে রোহিত শর্মার। ঝড়ো এই ইনিংসে ৪৩টি বল খেলেছেন রোহিত আর ইনিংস জুড়ে মেরেছেন ছয়টি করে চার এবং ছয়।
শেষ পর্যন্ত লোকেশ রাহুলের ৮ এবং শ্রেয়াস আইয়ারের ২৩ রানে ২৬ বল বাকি থাকতেই ৮ উইকেটের জয় তুলে নেয় স্বাগতিক ভারত। আর এতেই তিন ম্যাচ সিরিজে সমতায় ফেরে স্বাগতিক ভারত।